আজকাল ওয়েবডেস্ক: মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে মূল্যবান ধাতুর দামে বড় ধাক্কা লেগেছে। স্পট গোল্ড একদিনে প্রায় ৬.৩% কমে আউন্সপ্রতি ৪,০৮২.০৩ ডলার-এ নেমে এসেছে—যা ২০১৩ সালের এপ্রিলের পর থেকে সোনার সবচেয়ে বড় একদিনের পতন। একইসঙ্গে স্পট সিলভার-এর দামও তীব্রভাবে নেমে গেছে, প্রায় ৮.৭% পতন হয়ে আউন্সপ্রতি ৪৭.৮৯ ডলার। এটি ফেব্রুয়ারি ২০২১-এর পর রুপোর সবচেয়ে বড় দৈনিক পতন বলে খবর।
এই বড়সড় পতন একযোগে সোনা ও রুপোর বাজারে দেখা যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বিস্মিত। দুই ধাতুই বছরের সর্বনিম্ন দামের কাছাকাছি অবস্থান করছে, এবং এই পতন বাজারে এক তীব্র বিক্রির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সোনার দামে দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন
সোনার দাম একদিনে ৬% এর বেশি পড়ে যাওয়া অত্যন্ত বিরল ঘটনা। সর্বশেষ এমন পতন হয়েছিল ২০১৩ সালের মাঝামাঝি, যখন মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের নীতিগত পরিবর্তনের আশঙ্কায় বিশ্ববাজারে সোনার দামে ধস নামে। এবারও সেই রেকর্ডের সমকক্ষ মাত্রায় সোনার দাম কমে যাওয়ায় বিশ্লেষকরা একে “ঐতিহাসিক পতন” হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
এই পতনের ফলে সোনার দাম বহু বছরের নিম্নস্তরে পৌঁছেছে। বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এমন তীব্র একদিনের বিক্রির চাপ সাধারণত তখনই দেখা যায়, যখন বিনিয়োগকারীরা হঠাৎ ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে অর্থ তুলে নেন বা মুনাফা সংরক্ষণের চেষ্টা করেন। যদিও মঙ্গলবারের লেনদেনে এই পতনের কারণ সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, তবু বাজারে একধরনের আতঙ্কের বিক্রির প্রবণতা স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: দীপাবলিতে ভারতে খুচরো বিক্রি দেখে চোখ কপালে উঠল, নেপথ্যে কী জিএসটি?
রুপোর বাজারেও ব্যাপক ধস
রুপোর দামও একই দিনে বড়সড় পতন দেখেছে—৮.৭% হ্রাস পেয়ে আউন্সপ্রতি ৪৭.৮৯ ডলার। এটি গত চার বছরের মধ্যে রুপোর সবচেয়ে বড় একদিনের মূল্যহ্রাস। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষবার রুপোর দাম এভাবে হঠাৎ কমেছিল, যখন বিশ্বজুড়ে খুচরো বিনিয়োগকারীদের একযোগে বিক্রির ফলে বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়।
রুপো সাধারণত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত ধাতু হিসেবে বেশি চাহিদাসম্পন্ন, তাই এর দামের ওঠানামা বিশ্বের অর্থনৈতিক গতি ও বিনিয়োগ মনোভাবের প্রতিফলন ঘটায়। এই পতন ইঙ্গিত দেয় যে বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে নিরাপদ সম্পদ থেকেও অর্থ তুলে নিচ্ছেন, যা সামগ্রিক বাজারের দুর্বলতাকে প্রতিফলিত করে।
বাজারে আতঙ্ক ও নজিরবিহীন অস্থিরতা
একই দিনে সোনা ও রুপোর দামে এত বড় পতন বিশ্ববাজারে অত্যন্ত বিরল ঘটনা। সাধারণত এই দুই ধাতু পরস্পর বিপরীতমুখীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, কিন্তু মঙ্গলবারের সেশনে উভয়েই বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে বিশ্লেষকদের মতে, এটি কেবল ধাতু বাজার নয়, বরং বৃহত্তর আর্থিক বাজারে এক ধরনের সামগ্রিক বিক্রির ইঙ্গিত বহন করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবারের ট্রেডিং সেশন সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই পতন বাজারে এক ধাক্কা দিলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূল্যবান ধাতুর ক্ষেত্রে এমন সংশোধন ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার পথও তৈরি করতে পারে।
তবে আপাতত বিনিয়োগকারীদের নজর পুরোপুরি কেন্দ্রীভূত রয়েছে সোনা ও রুপোর দিকেই, যেগুলির মঙ্গলবারের পতন সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে গভীর বলে ধরা হচ্ছে।
