আজকাল ওয়েবডেস্ক: আজ সোনার মালিক হতে চায় সবাই—কেবল ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরাই নয়, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলিও দ্রুতগতিতে তাদের সোনার ভাণ্ডার বাড়াচ্ছে। বিগত কয়েক দশকের মধ্যে এটি সোনার সবচেয়ে দ্রুত সঞ্চয়ের সময়। তবে এটি কোনও নস্টালজিয়া নয়, সোনার মানদণ্ডে ফিরে যাওয়ারও নয়। বরং এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ—বিশ্ব অর্থনীতির নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা।
বিশ্ব এখন এমন এক সময়ে প্রবেশ করেছে যেখানে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি মন্থর, মুদ্রাস্ফীতি অনিয়ন্ত্রিত, আর সুদের হার বাড়িয়েও স্থিতিশীলতা আনা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক নিষ্পত্তি ব্যাঙ্কের মতে, উন্নত দেশগুলির গড় বৃদ্ধি এখন ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রচলিত নিরাপদ সম্পদ—যেমন সরকারি বন্ড—আর নির্ভরযোগ্য নয়। বন্ডের সুদের হার অনিশ্চিত, এবং মুদ্রার মানও রাজনৈতিক ঘটনার প্রভাবে বদলে যাচ্ছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলো এখন সেই সম্পদের দিকে ফিরছে যেটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে টিকে আছে—সোনা।
আরও পড়ুন: আইটিআর ফাইল করার সময় ভুল হয়েছে? চিন্তার কিছু নেই রয়েছে ‘আপডেটেড রিটার্ন’ দাখিলের সুযোগ
কেন সোনার দিকে ঝোঁক?
সোনা একটি অনন্য সম্পদ—এটি কোনও দেশের দায়বদ্ধতার উপর নির্ভরশীল নয়, এর উপর নিষেধাজ্ঞা বা ঋণঝুঁকি নেই। সহজ ভাষায়, এটি কখনও ডিফল্ট করে না, মুদ্রাস্ফীতিতে অবমূল্যায়িত হয় না, এবং রাজনৈতিক চাপেও স্থিত থাকে।
চীন, ভারত, রাশিয়া, তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ডলারের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে। সোনা মুদ্রানীতির স্বাধীনতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়ায়, নিষেধাজ্ঞা থেকে রক্ষা দেয় এবং বিশ্বের মুদ্রা ব্যবস্থার পরিবর্তিত কাঠামোয় বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করে। ডিজিটাল মুদ্রার যুগে যখন অর্থব্যবস্থা দ্রুত রূপান্তরিত হচ্ছে, তখন সোনা আর্থিক দমননীতির বিরুদ্ধে একটি সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে।
২০২৫ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলো প্রায় ৯০০ টন সোনা কিনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে—এটি টানা চতুর্থ বছর যেখানে গড়ের চেয়ে অনেক বেশি ক্রয় হবে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের ২০২৫ সালের হিসেব অনুযায়ী, ৭৬ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক আগামী পাঁচ বছরে তাদের সোনার অংশ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে, ৭৩ শতাংশ মনে করে যে মার্কিন ডলারের অংশ বিশ্ব রিজার্ভে ক্রমশ কমবে। এই ধারাবাহিক সরকারি ক্রয় সোনার দামে একটি ‘স্ট্রাকচারাল ফ্লোর’ তৈরি করেছে। সুদের হার যতই বাড়ুক না কেন, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের চাহিদা সোনার বাজারে স্থায়ী সহায়তা দিচ্ছে।
আইএমএফ-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের রিজার্ভের প্রায় ৫৮% মার্কিন ডলারে রয়েছে, কিন্তু এর অংশ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। রাশিয়ার উপর আরোপিত আর্থিক নিষেধাজ্ঞা এবং ভবিষ্যতে অন্য দেশগুলির উপর একই পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা অনেক সরকারকে সতর্ক করে তুলেছে।
ডলারভিত্তিক সম্পদ রাজনৈতিক প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, বিপরীতে সোনা সেই ব্যবস্থার বাইরে অবস্থান করে—দেশের ভেতরে সংরক্ষণ করা যায়, বিশ্বে বেচাকেনা করা যায়, এবং কোনও দেশের নীতির উপর নির্ভর করে না। এই কারণেই উদীয়মান অর্থনীতিগুলি এখন সোনাকে কেবল অলঙ্কার নয়, বরং অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করছে।
