আজকাল ওয়েবডেস্ক: টাটা গ্রুপের শাখা টাটা ট্রাস্টস সর্বসম্মতিক্রমে ভেনু শ্রীনিবাসনকে আজীবন ট্রাস্টি হিসেবে পুনর্নিয়োগ করেছে। মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদনে এই খবর প্রকাশিত হয়। সংস্থার অভ্যন্তরে বিভাজন ও মতভেদ চলমান থাকা অবস্থায় এই পুনর্নিয়োগকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভেনু শ্রীনিবাসনের মেয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার কথা ২৩ অক্টোবর ২০২৫-এ। তার ঠিক আগে এই পুনর্নিয়োগ ট্রাস্টের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। বর্তমানে টাটা ট্রাস্টসের ভিতরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মতপার্থক্য চলছে—এক পক্ষ নোয়েল টাটা-র নেতৃত্বে, যিনি রতন টাটার মৃত্যুর পর দায়িত্ব নিয়েছেন; অপর পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন মেহলি মিস্ত্রি, যিনি শাপুরজি পালোনজি পরিবারের ঘনিষ্ঠ।
ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে শ্রীনিবাসনের পুনর্নিয়োগে সব ট্রাস্টির সম্মতি ছিল। তবে, টাটা ট্রাস্টস এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও মন্তব্য করেনি।
এই পুনর্নিয়োগের পর এখন নজর পড়েছে মেহলি মিস্ত্রি-র দিকে, যার মেয়াদ শেষ হবে ২৮ অক্টোবর ২০২৫-এ। মিস্ত্রির পুনর্নিয়োগ এবং তাকে আজীবন ট্রাস্টি হিসেবে ধরে রাখতে হলে সব ট্রাস্টির সর্বসম্মত অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুন: ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার? বিস্ফোরক হলেন প্রশান্ত কিশোর
একজন ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছেন, “নিয়ম অনুযায়ী পুনর্নিয়োগ ও নতুন নিয়োগ, উভয়ই সর্বসম্মতিক্রমে হতে হয়। একবার আজীবন মেয়াদের জন্য পুনর্নিয়োগ হলে সেটি সব ট্রাস্টির ক্ষেত্রেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রযোজ্য।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর ২০২৪-এ অনুষ্ঠিত টাটা ট্রাস্টসের মূল বৈঠকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী, কোনো ট্রাস্টির মেয়াদ শেষ হলে, তাকে সংশ্লিষ্ট ট্রাস্টের দ্বারা পুনর্নিয়োগ করা হবে—এবং এই নিয়োগের মেয়াদে কোনো সীমা থাকবে না।
এছাড়া, যদি কোনও ট্রাস্টি এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেন, তবে তা ট্রাস্টের প্রতি ‘অঙ্গীকারভঙ্গ’ হিসেবে গণ্য হবে এবং সেই ব্যক্তি ‘এমন আচরণের কারণে টাটা ট্রাস্টসে থাকার যোগ্যতা হারাবেন’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
টাটা ট্রাস্টস ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী সংস্থা, যা সার দরাবজি টাটা ট্রাস্ট এবং সার রতন টাটা ট্রাস্ট-সহ একাধিক দাতব্য সংস্থাকে তত্ত্বাবধান করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, টাটা ট্রাস্টসের হাতে রয়েছে টাটা সন্স-এর ৬৬ শতাংশ শেয়ার, যা টাটা গ্রুপের মূল হোল্ডিং কোম্পানি। টাটা সন্সের মাধ্যমেই টাটা গ্রুপের সব সংস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে।
অন্যদিকে, শাপুরজি পালোনজি পরিবার টাটা সন্সের ১৮ শতাংশের বেশি শেয়ারের মালিক। এই পরিবারের সঙ্গে টাটা গ্রুপের দীর্ঘ সম্পর্ক ও মতভেদ দুই-ই রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, টাটা ট্রাস্টসের এই পুনর্নিয়োগ সিদ্ধান্ত শুধু অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার ইঙ্গিতই নয়, বরং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনাও নির্ধারণ করবে। কারণ, টাটা ট্রাস্টসের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করেই গোটা টাটা গ্রুপের নেতৃত্ব, কৌশল ও দাতব্য কার্যক্রমের দিক নির্ধারিত হয়।
