আজকাল ওয়েবডেস্ক: সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই স্বস্তি। ঘুমের জন্য প্রত্যেকেরই কিছু পছন্দের ভঙ্গি বা ‘কমফোর্ট পজিশন’ থাকে। অনেকেই উপুড় হয়ে বা পেটে ভর দিয়ে শুতে আরাম পান। তুলতুলে বালিশে মুখ গুঁজে এমন ঘুমকে শান্তির মনে হলেও, বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই অভ্যাসই নিঃশব্দে আপনার শরীরে ডেকে আনছে একাধিক গুরুতর সমস্যা। দীর্ঘমেয়াদে এর কুফল হতে পারে মারাত্মক।
প্রথম এবং সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হয় শিরদাঁড়ার। আমাদের শিরদাঁড়ার একটি স্বাভাবিক ‘এস’ আকৃতির বক্রতা রয়েছে, যা শরীরের ভারসাম্য এবং নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন আমরা উপুড় হয়ে ঘুমাই, তখন পেটের এবং মধ্যভাগের ওজন শিরদাঁড়ার উপর অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি এই চাপে শিরদাঁড়ার স্বাভাবিক বক্রতা নষ্ট হয়ে যায়। চিকিৎসকদের মতে, এই অভ্যাসের ফলে পিঠ এবং কোমরে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, এমনকী ভবিষ্যতে স্পাইনাল ডিস্কের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ঘুম থেকে ওঠার পর পিঠে বা কোমরে ব্যথা বা আড়ষ্টতা দেখা দিতে পারে।
দ্বিতীয়ত, মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘাড়। উপুড় হয়ে শুলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে আপনাকে বাধ্য হয়েই ঘাড় একদিকে দীর্ঘক্ষণ বেঁকিয়ে রাখতে হয়। এর ফলে ঘাড়ের পেশি, লিগামেন্ট এবং কশেরুকার উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাড় এমন ভঙ্গিতে থাকার ফলে স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি হয়, যা থেকে ঘাড়ে তীব্র ব্যথা বা ‘সার্ভিকাল পেন’ শুরু হতে পারে। অনেক সময় এই চাপ থেকে ‘হার্নিয়েটেড ডিস্ক’ বা স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মতো জটিলতাও তৈরি হয়, যার ফলে হাতে ঝিঁ ঝিঁ ধরা বা কাঁধ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া এবং ব্যথা হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।

এভাবে শোয়ার ভঙ্গি শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়াতেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। পেটে ভর দিয়ে শোয়ার ফলে ফুসফুস এবং ডায়াফ্রামের উপর শরীরের ওজনের চাপ পড়ে, ফলে ফুসফুস পুরোপুরি প্রসারিত হতে পারে না। এর কারণে ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস অগভীর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা সামান্য হলেও কমিয়ে দিতে পারে।
শুধু তাই নয়, সৌন্দর্য সচেতন ব্যক্তিদের জন্যও এই অভ্যাস মোটেই সুখকর নয়। উপুড় হয়ে শুলে মুখের ত্বক দীর্ঘক্ষণ বালিশের সঙ্গে চাপা লেগে থাকে। এর ফলে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয় এবং মুখে অকালে বলিরেখা বা ‘স্লিপ লাইনস’ দেখা দিতে পারে। ত্বকের কোষগুলি পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, ফলে ত্বক তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারায়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ঘুমের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ভঙ্গি হল চিৎ হয়ে বা পাশ ফিরে শোয়া। যদি উপুড় হয়ে শোয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা কঠিন হয়, তবে পেটের নিচে একটি পাতলা বালিশ এবং কপালে একটি ছোট তোয়ালে বা পাতলা বালিশ রেখে শোয়ার চেষ্টা করুন। এতে শিরদাঁড়া এবং ঘাড় কিছুটা হলেও স্বাভাবিক অবস্থানে থাকবে। তবে দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতার জন্য এই অভ্যাস ত্যাগ করাই শ্রেয়। আরামের ঘুম যেন ভবিষ্যতের অসুস্থতার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সেদিকে নজর রাখা জরুরি।
