আজকাল ওয়েবডেস্ক: সারা দিনের ক্লান্তি শেষে নরম বালিশে মাথা রাখার আরামই আলাদা। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কি, আপনার এই প্রিয় সঙ্গীটিই হতে পারে নানা ভয়ঙ্কর রোগের উৎস? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পুরোনো বালিশ ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে ধুলো, ঘাম, শরীরের মৃত কোষ এবং নানা ধরনের জীবাণুর এক আদর্শ বাসস্থান। এই অদৃশ্য শত্রুরাই ডেকে আনতে পারে একাধিক শারীরিক সমস্যা।
পুরোনো বালিশে কোন বিপদ লুকিয়ে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি ব্যবহৃত বালিশের ওজনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই হতে পারে ধুলোর কীট বা ডাস্ট মাইট, মৃত কোষ, ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ভরা। খালি চোখে এদের দেখা না গেলেও, শ্বাসপ্রশ্বাস এবং ত্বকের সংস্পর্শে এসে এরা আমাদের শরীরে নানা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

১। অ্যালার্জি ও হাঁপানি: পুরোনো বালিশে থাকা প্রধান শত্রু হল ডাস্ট মাইট। এই অতিক্ষুদ্র জীবগুলি মানুষের ত্বক থেকে ঝরে পড়া মৃত কোষ খেয়ে বেঁচে থাকে। এদের মলই অ্যালার্জির অন্যতম প্রধান কারণ। এর ফলে অনবরত হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে জল পড়া, চোখ চুলকানো এবং চোখ লাল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। যাঁদের হাঁপানি বা অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ডাস্ট মাইট মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি শ্বাসকষ্টও বাড়াতে পারে।
২। ত্বকের সমস্যা: ঘুমের সময় আমাদের মুখ ও ত্বকের সঙ্গে বালিশের সরাসরি সংস্পর্শ থাকে। বালিশে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া, ঘাম এবং তেল ত্বকের রোমকূপ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে মুখে ব্রণ, ফুসকুড়ি, একজিমা এবং অন্যান্য ত্বকের সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।
৩। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ: আর্দ্র ও উষ্ণ পরিবেশে বালিশের ভেতরে ‘অ্যাসপারজিলাস’-এর মতো ছত্রাক জন্মাতে পারে। এই ছত্রাকের স্পোর বা রেণু নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। বিশেষত যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাঁদের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
৪। ঘুমের ব্যাঘাত ও ব্যথা: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বালিশ তার আকৃতি হারায়। পুরোনো, দলা পাকিয়ে যাওয়া বালিশ ঘাড় এবং কাঁধকে সঠিক ভাবে ঠেস দিতে পারে না। এর ফলে ঘাড়ে ব্যথা, কাঁধ শক্ত হয়ে যাওয়া, এমনকি মাথাব্যথার মতো সমস্যাও দেখা যায়, যা ঘুমের গুণমান নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।
কত দিন অন্তর বালিশ বদলানো উচিত?
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বালিশের উপাদান এবং ব্যবহারের ধরনের ওপর নির্ভর করলেও, সাধারণভাবে প্রতি ১ থেকে ২ বছর অন্তর বালিশ বদলে ফেলা উচিত। সিন্থেটিক ফাইবারের বালিশ এক বছর এবং ফোম বা তুলোর বালিশ দেড় থেকে দু'বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে।
বালিশ ভাল রাখার উপায় কী?
নিয়মিত পরিষ্কার করুন: প্রতি সপ্তাহে গরম জলে বালিশের কভার কেচে নিন। সম্ভব হলে, মাসে অন্তত একবার বালিশটিও পরিষ্কার করুন।
রোদে দিন: সপ্তাহে অন্তত একদিন বালিশ কড়া রোদে দিন। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি জীবাণু এবং ডাস্ট মাইট ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
পিলো প্রোটেক্টর ব্যবহার করুন: বালিশের উপরে একটি প্রোটেক্টর ব্যবহার করলে ধুলো, ঘাম এবং তেল সরাসরি বালিশের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না।
সুতরাং, কেবল বিছানার চাদর নয়, এবার থেকে আপনার বালিশের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিন। সামান্য সতর্কতা আপনাকে অনেক বড় অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
