আজকাল ওয়েবডেস্ক: ধূমপান ছেড়ে দেওয়া জীবনের অন্যতম সেরা এবং কঠিন সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে একটি। ধূমপান ছাড়ার পরমুহূর্ত থেকেই শরীর নিজেকে মেরামত করতে শুরু করে দেয়। হৃদ্‌রোগ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমতে শুরু করে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাব থেকে ফুসফুসকে মুক্ত করা এবং তার কার্যক্ষমতা বাড়ানো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চললে ফুসফুসকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সতেজ ও কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব।

প্রাক্তন ধূমপায়ীদের ফুসফুসের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ-

 

১। শরীরচর্চা হোক নিত্যসঙ্গী

ধূমপান ছাড়ার পর ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ব্যায়ামের কোনও বিকল্প নেই। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শ্বাস-প্রশ্বাসের পেশিগুলি শক্তিশালী হয় এবং ফুসফুসের অক্সিজেন গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়ে।

অ্যারোবিক ব্যায়াম: হাঁটা, জগিং, সাঁতার বা সাইক্লিং-এর মতো অ্যারোবিক ব্যায়াম ফুসফুসের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি গতির ব্যায়াম করুন।

শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: প্রাণায়াম বা ডিপ বেলি ব্রেদিং-এর মতো গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসের গভীরে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বের করতে এবং ফুসফুসের প্রসারণ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট এই ধরনের ব্যায়াম করুন।

২। খাদ্যাভ্যাসে আনুন পরিবর্তন

সঠিক খাবার ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে পুনর্গঠনে সাহায্য করে। আপনার খাদ্যতালিকায় কোন কোন খাবার যোগ করবেন?

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার: জাম, স্ট্রবেরি, সবুজ শাকসবজি (পালং, ব্রকোলি) এবং গাজরের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল ও সবজি ফুসফুসকে দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

প্রদাহরোধী খাবার: হলুদ, আদা, রসুন, এবং গ্রিন টি-র মতো খাবার ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত জল পান: সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করলে ফুসফুসে জমে থাকা শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে বেরিয়ে যেতে সুবিধা হয়, যা ফুসফুসকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

৩। দূষণ থেকে দূরে থাকুন

আপনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু আপনার চারপাশের বাতাস এখনও আপনার ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে।

পরোক্ষ ধূমপান এড়িয়ে চলুন: যে সমস্ত জায়গায় অন্যেরা ধূমপান করছেন, সেই স্থানগুলি সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন। পরোক্ষ ধূমপানও ফুসফুসের জন্য সমান ক্ষতিকর।

বায়ু দূষণ থেকে সাবধান: বাড়ির বাইরে বেরোলে, বিশেষ করে অতিরিক্ত দূষণযুক্ত এলাকায়, মাস্ক ব্যবহার করুন। বাড়িতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারলে তা ফুসফুসের জন্য খুবই উপকারী। বাড়ির অন্দরে ধূপ বা মশা তাড়ানোর ধোঁয়া থেকেও দূরে থাকুন।

৪। নিয়মিত ডাক্তারি পরামর্শ

ধূমপান ছাড়ার পর একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা অত্যন্ত জরুরি। কোনও রকম সমস্যা, যেমন দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হলে তা কখনই অবহেলা করবেন না। চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে পালমোনারি ফাংশন টেস্ট বা অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার ফুসফুসের বর্তমান অবস্থা নিরীক্ষা করতে পারেন।

মনে রাখবেন, ধূমপান ছেড়ে আপনি ফুসফুসকে সারিয়ে তোলার প্রথম এবং সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপটি নিয়ে ফেলেছেন। রাতারাতি হয়তো সব ক্ষতি পূরণ হবে না, কিন্তু ধৈর্য ধরে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা মেনে চললে আপনার ফুসফুস ধীরে ধীরে অনেকটাই সেরে উঠবে এবং আপনি এক নতুন, সতেজ জীবন ফিরে পাবেন।