আজকাল ওয়েবডেস্ক: ‘আর্লি বার্ড’ না ‘নাইট আউল’? শুধু ঘুম নয়, শরীরচর্চার জগতেও এই বিতর্ক বহুদিনের। কেউ ভোরের নরম আলো মেখে পার্কে দৌড়ানোকেই আদর্শ বলে মনে করেন, তো কারও আবার সারাদিনের কাজের শেষে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরালেই মেলে মানসিক শান্তি। কিন্তু নিছক অভ্যাস বা সুবিধার ঊর্ধ্বে উঠে যদি প্রশ্ন করা হয়, আমাদের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য কোন সময়টা সবচেয়ে বেশি উপকারী? সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা এই বহুচর্চিত প্রশ্নের উত্তরে নতুন দিশা দেখাচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে আসছেন, শরীরচর্চা করাটাই আসল কথা, সেটা দিনের কোন সময়ে করা হচ্ছে, তা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সকালে ব্যায়াম করলে তা সারাদিনের জন্য বিপাক ক্রিয়াকে চাঙ্গা করে এবং মনকে তরতাজা রাখে। অন্যদিকে, সন্ধ্যায় বা বিকেলে শরীরচর্চা করলে পেশি উষ্ণ থাকায় কর্মক্ষমতা বেশি পাওয়া যায় এবং আঘাত লাগার ঝুঁকি কমে। সারাদিনের মানসিক চাপ কমাতেও সান্ধ্যকালীন ব্যায়ামের জুড়ি মেলা ভার।

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি বলছে, ব্যায়ামের সময় এবং হৃদরোগের ঝুঁকির মধ্যে একটি নির্দিষ্ট যোগসূত্র থাকতে পারে। ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি’-তে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র এই বিষয়ে আলোকপাত করেছে। প্রায় ৮৬ হাজার মানুষের উপর করা এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা মূলত সকালের দিকে (সকাল ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে) শরীরচর্চা করেন, তাঁদের হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি প্রকট।

গবেষকদের মতে, এর নেপথ্যে থাকতে পারে আমাদের শরীরের নিজস্ব জৈবিক ঘড়ি বা ‘সার্কাডিয়ান রিদম’। আমাদের হৃদযন্ত্র এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম আচরণ করে। সকালের দিকে শরীরচর্চা করলে তা রক্তচাপ এবং ‘স্ট্রেস হরমোন’ কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বেশি সাহায্য করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়ক।

তবে কি এর অর্থ এই যে, সন্ধ্যায় ব্যায়াম করলে কোনও লাভই নেই? গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তাঁদের কথায়, “এই গবেষণা একটি সম্ভাবনার কথা বলছে, কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। নিঃসন্দেহে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ। তবে সবচেয়ে বড় কথা হল ধারাবাহিকতা। নিজের জীবনশৈলীর সঙ্গে মানিয়ে যদি সন্ধ্যায় ব্যায়াম করা আপনার জন্য সুবিধাজনক হয় এবং আপনি সেটা রোজ করতে পারেন, তবে সেটাই আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ সময়।” তাঁরা আরও যোগ করেন, “যাঁরা সকালে সময় পান না, তাঁরা যদি এই গবেষণার কথা ভেবে ব্যায়াম করাই ছেড়ে দেন, তবে তা হবে হিতে বিপরীত। শরীরচর্চা না করার চেয়ে সন্ধ্যায় বা বিকেলে করা অনেক বেশি উপকারী।”

সুতরাং, নতুন গবেষণা ভোরের শরীরচর্চার দিকে কিছুটা ঝুঁকলেও, মূল বার্তাটি অপরিবর্তিত থাকছে।

হৃদযন্ত্রের জন্য সবচেয়ে উপকারী হল নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস। আপনার সুবিধা, শরীরের অবস্থা এবং মানসিক প্রস্তুতির উপর ভিত্তি করে দিনের যে কোনও একটি সময় বেছে নিন। মূল লক্ষ্য হল, অলসতাকে জীবন থেকে দূরে রাখা এবং শরীরকে সচল রাখা- তা সে ভোরের সূর্যের আলোতেই হোক, বা সন্ধ্যার নিয়ন আলোয়।