আজকাল ওয়েবডেস্ক: দাঁতের যন্ত্রণা বা ক্যাভিটির সমস্যায় ভোগেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে নিয়মিত ব্রাশ করা, ফ্লস করা বা দন্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া, চেষ্টার কসুর থাকে না। কিন্তু এ বার হয়তো এই সব ঝঞ্ঝাট থেকে মিলতে পারে চিরস্থায়ী মুক্তি। সৌজন্যে, জৈবপ্রযুক্তি জগতের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার- ন্যানো-ভ্যাকসিন বা ন্যানো টিকা। বিজ্ঞানীরা এমন এক টিকা তৈরি করেছেন, যা মানব সভ্যতার সবচেয়ে পুরোনো সমস্যাগুলির অন্যতম দন্তক্ষয়কে গোড়া থেকে নির্মূল করার ক্ষমতা রাখে।
আরও পড়ুন: পুরুষরা অন্তর্বাস কিনছেন? না একটিই দিনের পর দিন পরছেন? সেটাই বলে দিতে পারে অর্থনীতির অবস্থা! কীভাবে?
ভাবুন তো, এমন এক টিকা যা শরীরে প্রবেশ করে ‘পথনির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্রের’ মতো সরাসরি শত্রু ব্যাকটিরিয়াকে খুঁজে বার করে নিষ্ক্রিয় করে দেবে। বিজ্ঞানীরা ঠিক এমনটাই সম্ভব করেছেন। ন্যানো-কণা, অর্থাৎ এক মিটারের একশো কোটি ভাগের এক ভাগ আকারের কণা ব্যবহার করে তৈরি এই টিকা দাঁতের ক্ষয় সৃষ্টিকারী মূল ব্যাকটিরিয়া, ‘স্ট্রেপটোকক্কাস মিউটান্স’-এর বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জাগিয়ে তোলে।
সাধারণ টিকার মতো শুধু বিশেষ পদার্থ শরীরে প্রবেশ করানোই নয়, এই ন্যানো-টিকা অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শরীরের প্রতিরোধ কোষগুলিতে সরাসরি মূল অ্যান্টিজেন পৌঁছে দেয়। এর ফলে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্রুত, শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী ভাবে দাঁতের ক্ষয়কারী ব্যাকটিরিয়ার বিরুদ্ধে সুরক্ষা বলয় তৈরি করে। এটিকে মুখগহ্বরের জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় ‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ বা আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা বলা যেতে পারে।
এই ন্যানো-টিকাগুলি মূলত পিএলজিএ (পলি-ল্যাকটিক-কো-গ্লাইকোলিক অ্যাসিড)-এর মতো উপাদান দিয়ে তৈরি। এই উপাদানগুলি শুধু যে জৈববিয়োজ্য (বায়োডিগ্রেডেবল) এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ তাই নয়, এগুলি থেকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় অ্যান্টিজেন নির্গত করাও সম্ভব, যা টিকার কার্যকারিতা বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়।
ইতিমধ্যেই জীবজন্তুর উপর এর পরীক্ষা সফল হয়েছে। টিকা দেওয়ার পর তাদের লালারসে উচ্চ মাত্রায় ‘ইমিউনোগ্লোবিউলিন এ’ (আইজি এ) এবং রক্তে ‘ইমিউনোগ্লোবিউলিন জি’ (আইজি জি) অ্যান্টিবডির খোঁজ মিলেছে। এই অ্যান্টিবডিগুলি হল শরীরের ‘প্রতিরক্ষা বলয়ের সৈনিক’, যারা দাঁতের উপর ব্যাকটিরিয়া বসার আগেই তাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
গবেষকদের আশা, এই প্রযুক্তি খুব শীঘ্রই ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ বা মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে প্রবেশ করবে এবং বিশ্বের প্রথম সর্বজনীন অ্যান্টি-ক্যাভিটি টিকা হিসাবে কাজ করবে।
এক বার কল্পনা করুন- শৈশবে দেওয়া একটি মাত্র টিকা দাঁতকে বছরের পর বছর সুরক্ষা দেবে। বারে বারে ব্রাশ করা বা বিপুল খরচে দাঁতের চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন হয়তো আর থাকবে না। যদিও অনেকটা পথ চলা এখনও বাকি, তবে ভবিষ্যৎ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এমন এক বিশ্বের স্বপ্ন দেখছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানে শিশুদের অমলিন হাসি শৈশব থেকেই সুরক্ষিত থাকবে ন্যানো-টিকার দৌলতে।
