আজকাল ওয়েবডেস্ক: চাকরি, কেরিয়ার গুছিয়ে একটু বেশি বয়সে সন্তানের পরিকল্পনা করছেন? আজকের যুগে এমনটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণা হবু বাবাদের জন্য এক নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পুরুষদের বয়স যত বাড়ে, তাঁদের সন্তানের মধ্যে কিছু বিরল জিনগত রোগের ঝুঁকিও তত বাড়তে থাকে। এর কারণ হিসেবে এক আশ্চর্য জৈবিক প্রক্রিয়াকে চিহ্নিত করেছেন তাঁরা।
বহুদিন ধরেই চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি জানা যে, বেশি বয়সের বাবাদের সন্তানদের মধ্যে কিছু জিনগত রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এতদিন এর সঠিক কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা সেই রহস্যের সমাধান করেছেন। তাঁদের মতে, এর মূল কারণ হল পুরুষদের শুক্রাশয়ের মধ্যে থাকা ত্রুটিপূর্ণ কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।
কীভাবে ঘটে এই প্রক্রিয়া?
পুরুষদের শরীরে শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়াটি জীবনভর চলতে থাকে। এর জন্য শুক্রাশয়ের মধ্যে থাকা স্টেম কোষগুলি ক্রমাগত বিভাজিত হতে থাকে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই কোষ বিভাজনের সময় জিনের গঠনগত কিছু পরিব্যপ্তি (মিউটেশন) ঘটতে পারে। সাধারণত, এই ধরনের মিউটেশন শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার দ্বারা ঠিক হয়ে যায় অথবা কোষগুলি নষ্ট হয়ে যায়।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কিছু ক্ষেত্রে এই পরিবর্তিত বা ত্রুটিপূর্ণ কোষগুলি এক অদ্ভুত আচরণ করে। এগুলিকে বিজ্ঞানের ভাষায় ‘সেলফিশ সেল’ ‘স্বার্থপর’ কোষ বলা যেতে পারে। এই কোষগুলি শুক্রাশয়ের মধ্যে থাকা সুস্থ কোষগুলির চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করে। বিষয়টিকে অনেকটা আগাছার মতো ভাবা যেতে পারে, যা বাগানের ভাল গাছের তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং জায়গা দখল করে নেয়।
গবেষকদের মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হয়। ফলে, একজন বয়স্ক পুরুষের শুক্রাশয়ে এই ত্রুটিপূর্ণ কোষগুলির সংখ্যা একজন তরুণ পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। ফলস্বরূপ, তাঁর শুক্রাণুর মধ্যেও এই রোগ সৃষ্টিকারী মিউটেশন বহন করার সম্ভাবনা আনুপাতিক হারে বেড়ে যায়। এই শুক্রাণু যখন ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে, তখন সেই ত্রুটিপূর্ণ জিনটি সন্তানের শরীরে প্রবেশ করে এবং ‘ডি নোভো মিউটেশন’ অর্থাৎ নতুন জিনগত রোগের জন্ম দেয়।
অ্যাপার্ট সিন্ড্রোম, অ্যাকোনড্রোপ্লাসিয়া বা নুনান সিন্ড্রোমের মতো কিছু বিরল কিন্তু গুরুতর রোগের সঙ্গে এই ধরনের মিউটেশনের যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। এই রোগগুলির ফলে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁরা নির্দিষ্ট সংখ্যক ডিম্বাণু নিয়েই জন্মান, যা নতুন করে তৈরি হয় না। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোষ বিভাজনজনিত মিউটেশনের ঝুঁকি থাকে না।
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?
পরিশেষে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই গবেষণার উদ্দেশ্য কাউকে ভয় দেখানো নয়, বরং পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা। চিকিৎসকরা আরও জানাচ্ছেন, দেরিতে বাবা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন এবং প্রয়োজনে জেনেটিক কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এই আবিষ্কার বিরল জিনগত রোগগুলির উৎস সন্ধানে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
