আজকাল ওয়েবডেস্ক: বয়স চল্লিশ পেরোতেই বহু মানুষ, বিশেষত মহিলারা, হাড়ের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। চিকিৎসকের পরামর্শে বা অনেক সময়ে নিজে থেকেই ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খাওয়া শুরু করেন। ধারণাটা অত্যন্ত সরল- হাড়ের মূল উপাদান যেহেতু ক্যালসিয়াম, তাই এর জোগান বাড়ালেই বুঝি হাড় মজবুত থাকবে এবং অস্টিওপোরোসিসের মতো ‘নীরব ঘাতক’ রোগকে দূরে রাখা যাবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করাটা শুধু ক্যালসিয়ামের জোগান দেওয়ার মতো একমাত্রিক বিষয় নয়, এর জন্য প্রয়োজন একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা।

অস্টিওপোরোসিস এমন একটি রোগ যেখানে হাড়ের ঘনত্ব কমে গিয়ে তা দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এর ফলে সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। চিকিৎসকদের মতে, শুধু ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টের উপর নির্ভর করে এই রোগের মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব। ক্যালসিয়াম হাড়ের জন্য অপরিহার্য, ঠিকই। কিন্তু সেই ক্যালসিয়ামকে শরীরে সঠিকভাবে শোষণ করা এবং হাড় পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য আরও কয়েকটি অনুঘটক প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: পেশি ফোলাতে স্তনদুগ্ধ খাচ্ছেন বডিবিল্ডাররা, প্রাপ্তবয়স্কদের এই দুধ কতটা উপকারী? কী বলছে বিজ্ঞান?

ক্যালসিয়ামের সঙ্গী কারা?
১। ভিটামিন ডি: হাড়ের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-কে বলা যেতে পারে ক্যালসিয়ামের সর্বোত্তম বন্ধু। শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকলে আপনি যতই ক্যালসিয়াম গ্রহণ করুন না কেন, তার সিংহভাগই শোষিত না হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। ভিটামিন ডি অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে এবং তাকে হাড়ের কাঠামোতে জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। এর প্রধান উৎস হল সূর্যালোক। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিট সকালের নরম রোদ গায়ে লাগানো উচিত। এ ছাড়াও তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি।
২। শরীরচর্চা: হাড়কে শক্তিশালী রাখতে শরীরচর্চার কোনও বিকল্প নেই। বিশেষত, ভারবহনকারী ব্যায়াম যেমন- দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা জরুরি। এই ধরনের কাজের ফলেই হাড়ের কোষগুলি নতুন করে ঘনত্ব বাড়াতে উদ্দীপিত হয়। এর পাশাপাশি পেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য স্ট্রেংথ ট্রেনিংও অত্যন্ত জরুরি, কারণ শক্তিশালী পেশি হাড়কে অবলম্বন দেয় এবং পড়ে গিয়ে আঘাত লাগার ঝুঁকি কমায়।
৩। অন্যান্য খনিজ ও প্রোটিন: হাড় কেবল ক্যালসিয়াম দিয়ে তৈরি নয়। এর জন্য ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন কে-এর মতো খনিজও প্রয়োজন। পালং শাক, ব্রকোলি, বাদাম, কুমড়োর বীজ, বিনস ইত্যাদি খাবারে এই উপাদানগুলি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। একইসঙ্গে, হাড়ের কাঠামোর প্রায় ৫০ শতাংশই প্রোটিন দিয়ে তৈরি। তাই খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন (ডাল, মাছ, ডিম, মুরগির মাংস, সয়াবিন) রাখাও আবশ্যক।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই অভ্যাসগুলি শরীর থেকে ক্যালসিয়াম শোষণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং হাড়ের ঘনত্ব কমার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
সুতরাং, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে হলে শুধু ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটের উপর ভরসা করে নিশ্চিন্ত হবেন না। বরং সুষম আহার, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনশৈলী গড়ে তোলার মাধ্যমেই হাড়ের প্রকৃত যত্ন নেওয়া সম্ভব। প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কিন্তু নিজের জীবনযাত্রার দায়িত্ব নিজের হাতেই তুলে নিতে হবে।