আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিশ্বজুড়ে যক্ষ্মা বা টিউবারকুলোসিস (টিবি) এখনও এক আতঙ্কের নাম। ফুসফুসে এর প্রকোপ সর্বাধিক হলেও, শরীরের অন্য অঙ্গও কিন্তু এই জীবাণুর হানাদারি থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়। রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে এই জীবাণু যখন হাড়ে, বিশেষ করে শিরদাঁড়া বা মেরুদণ্ডে পৌঁছয়, তখন পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একেই বলা হয় স্পাইনাল টিউবারকুলোসিস বা ‘পট’স ডিজিজ’। সময়মতো রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার অভাবে যা ডেকে আনতে পারে স্থায়ী পঙ্গুত্ব।
আরও পড়ুন: ৭ কোটি শুক্রাণু চাই! চাহিদা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ৫০ সঙ্গীর সঙ্গে একটানা সঙ্গম রানিমার! কোথায় থাকে এই রানি?
আরও পড়ুন: অন্য জাতের সঙ্গে সঙ্গম, তাতে জন্মানো সন্তানরাই বদলে দিচ্ছে বংশের স্বভাব-চরিত্র! এ কী দেখলেন গবেষকরা?

কেন এই রোগ বাসা বাঁধে?
স্পাইনাল টিবি-র জন্য দায়ী জীবাণুটি হল ‘মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস’, যা ফুসফুসের টিবি-র জন্যও দায়ী। মূলত, ফুসফুসে প্রাথমিক সংক্রমণের পরেই এই জীবাণু রক্তের মাধ্যমে শরীরের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। মেরুদণ্ড হল এর অন্যতম পছন্দের আশ্রয়স্থল। বিশেষত, পিঠের নীচের অংশ বা থোরাসিক স্পাইন এতে বেশি আক্রান্ত হয়।
যাঁদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অপুষ্টি, ডায়াবেটিস, এইচআইভি সংক্রমণ বা এমন কোনও ওষুধ সেবন যা শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দাবিয়ে রাখে, সেগুলি স্পাইনাল টিবি-র আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

উপসর্গ কী কী?
মেরুদণ্ডের টিবি-র উপসর্গগুলি প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময়েই অস্পষ্ট থাকে, যার ফলে রোগ নির্ণয়ে দেরি হয়। তবে কিছু লক্ষণ সম্পর্কে সতর্ক থাকা জরুরি।
১। ব্যথা: মূল উপসর্গ হল পিঠে বা কোমরে একটানা ব্যথা। এই ব্যথা বিশ্রাম নিলেও কমতে চায় না এবং রাতে বাড়তে পারে। আক্রান্ত স্থানে চাপ দিলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
২। জ্বর: দিনের অন্য সময় স্বাভাবিক থাকলেও, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে হালকা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা এই রোগের অন্যতম লক্ষণ।
৩। শারীরিক দুর্বলতা ও ওজন হ্রাস: কোনও আপাত কারণ ছাড়াই রোগীর ওজন কমতে থাকে। এর সঙ্গে থাকে ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং খিদে কমে যাওয়ার মতো সমস্যা। রাতে ঘাম হওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়।
৪। স্নায়বিক সমস্যা: রোগ বাড়তে থাকলে মেরুদণ্ডের কশেরুকা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং স্পাইনাল কর্ড বা স্নায়ুর উপর চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরা, অবশ হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা এবং ধীরে ধীরে হাঁটাচলার ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। পরিস্থিতি জটিল হলে কোমর থেকে নিম্নাঙ্গ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
৫। শারীরিক বিকৃতি: রোগ যখন অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছে, তখন মেরুদণ্ড সামনের দিকে ঝুঁকে কুঁজের (কাইফোসিস) মতো আকার ধারণ করতে পারে, যাকে ‘গিবাস ডিফর্মিটি’ বলা হয়।

চিকিৎসা পদ্ধতি
স্পাইনাল টিবি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে এবং সম্পূর্ণ চিকিৎসা করালে এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। এক্স-রে, সিটি স্ক্যান এবং এমআরআই-এর মতো পরীক্ষার মাধ্যমে মেরুদণ্ডের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। অনেক সময় বায়োপসি বা ফ্লুইড পরীক্ষা করে জীবাণুর উপস্থিতি সম্পর্কেও নিশ্চিত হন চিকিৎসকেরা।
এই রোগের মূল চিকিৎসা হলো অ্যান্টি-টিউবারকুলার থেরাপি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একাধিক ওষুধ ৯ থেকে ১২ মাস, বা ক্ষেত্রবিশেষে ১৮ মাস পর্যন্ত খেতে হয়। সম্পূর্ণ সুস্থ হতে ওষুধের কোর্স শেষ করা অত্যন্ত জরুরি। মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করে দিলে জীবাণু ফের সক্রিয় এবং আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।
পাশাপাশি, মেরুদণ্ডকে বিশ্রাম দিতে এবং বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে বিশেষ ধরনের ব্রেস বা বেল্ট পরার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি স্নায়ুর উপর চাপ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছয় বা শিরদাঁড়ার গঠন ভেঙে পড়ে, তবে শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।