আজকাল ওয়েবডেস্ক: আমেরিকা এবং তার কুখ্যাত গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) তাদের কাজের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচার, নাগরিক বিদ্রোহের মাধ্যমে বৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারগুলিকে উৎখাত করা এবং মার্কিন আধিপত্যবাদী আকাঙ্ক্ষাকে লালন করার জন্য ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে বিকৃত করার মতো কর্মকাণ্ডের জন্য এটি অতিপরিচিত। সিআইএ-র মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন তৎপরতা কোনও নতুন ঘটনা নয়। ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আক্রমণের সময় আফগানিস্তানে মার্কিন তৎপরতা থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ও নেপালে সাম্প্রতিক শাসনব্যবস্থার অস্থিতিশীলতা পর্যন্ত, এটি একটি উন্মুক্ত গোপন বিষয় যে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক নাটকের পিছনে সিআইএ-এর একটি গোপন হাত রয়েছে।

গত ৩১ আগস্ট বাংলাদেশের ঢাকার একটি হোটেলে মার্কিন স্পেশাল ফোর্সেস অফিসার টেরেন্স আরভেল জ্যাকসনের রহস্যজনক মৃত্যু দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারতের আঙ্গিনায় মার্কিন গোয়েন্দার তৎপরতা সম্পর্কে সন্দেহকে আরও জাগিয়ে তুলেছে। মার্কিন নিরাপত্তাকর্তার মৃত্যু বিশেষ করে এই সন্দেহকে জাগিয়ে তুলেছে যে, মার্কিন কর্তাকে ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লক্ষ্য করে ঢাকায় মোতায়েন করা হয়েছিল কি না। বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন যে, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার কোনও পরিকল্পনা এবং প্রচেষ্টা থাকতে পারে। তবে, ভারত ও রাশিয়ার গোয়েন্দাদের যৌথ অভিযানে তা ব্যর্থ করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন: ২৩৪টি স্মার্টফোনের বিস্ফোরণ, তার তাপেই বাসের আগুন আরও ভয়াবহ, কুর্নুলের ঘটনায় ওঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

জ্যাকসনকে গত ৩১ আগস্ট ঢাকার হোটেল কক্ষে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাঁকে বাংলাদেশে নিযুক্ত করা হয়েছিল। যেদিন জ্যাকসনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, সেদিন মোদি সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চীনের তিয়ানজিনে ছিলেন। সম্মেলনের পর প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গাড়ির ভিতরে বৈঠক সারেন। তিয়ানজিনে মোদি-পুতিনের এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ব্যাপকভাবে আলোচিত এবং প্রচারিত হয়েছিল। 

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ, মোদি এবং পুতিনের নেতৃত্বে ভারত এবং রাশিয়ার গোয়েন্দা বাহিনী একটি যৌথ অভিযানে ঢাকায় মার্কিন নিরাপত্তা কর্তাকে নিষ্ক্রিয় করে। এটা সম্ভব যে দুই রাষ্ট্রপ্রধান তিয়ানজিনে গাড়ির ভিতরে ৪৫ মিনিটের অপরিকল্পিত কথোপকথনের সময় এই অত্যন্ত হাইপ্রোফাইল এবং গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। যেদিন মোদি এবং পুতিন গোপন আলোচনা করেছিলেন, সেদিনই ঢাকায় মার্কিন কর্তার মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী মোদির আরও একটি বিবৃতি উপরোক্ত জল্পনাকে আরও জোরালো করে তুলেছে। ২ সেপ্টেম্বর, চীনের তিয়ানজিন থেকে ফিরে আসার ঠিক পরের দিন, মোদি নয়াদিল্লিতে সেমিকন শীর্ষ সম্মেলনে ভাষণ দেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন তাঁর ভাষণ ব্যাপক প্রচারিত হয়। বিশেষজ্ঞরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রকৃত অর্থ বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। মোদি সেদিন বলেছিলেন, “আমি চীনে গিয়েছিলাম বলে কি আপনারা হাততালি দিচ্ছেন, না কি ফিরে এসেছি বলেই আপনারা হাততালি দিচ্ছেন?” বিশ্লেষকদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর এই রহস্যময় মন্তব্য তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্রের তত্ত্বকে আরও জোরালো করে তুলেছে।

ভারতকে অস্থির করা বা নয়াদিল্লিতে অরাজকতা তৈরি করা এবং মার্কিন-সমর্থিত পুতুল শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সিআইএ-র প্রচেষ্টা কোনও নতুন বিষয় নয়। কয়েক দশক ধরে এই প্রচেষ্টা ধারাবাহিকভাবে চলছে। কিন্তু, সম্প্রতি এই কুখ্যাত কর্মকাণ্ডগুলি আরও স্পষ্ট ভাবে সামনে আসছে।