‌ আবু হায়াত বিশ্বাস, দিল্লি: বিজেপির ভোট চুরি নিয়ে এবার দেশজুড়ে পথে নামছে কংগ্রেস। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী সোমবার, ১১ আগস্ট দিল্লিতে বড়সড় বৈঠক হতে চলেছে হাত শিবিরের। দলের সাধারণ সম্পাদক, সব রাজ্যের পর্যবেক্ষক, সমস্ত ফ্রন্টাল সংগঠনের সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। জানা গিয়েছে, বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ কংগ্রেসের দলীয় কার্য্যালয় ইন্দিরা ভবনেও ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে ‘‌ভোট চুরি’ নিয়ে রাহুল গান্ধী যে প্রশ্ন তুলেছেন, সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। একইসঙ্গে রাজ্যে রাজ্যে ব্যাপক আকারে বিজেপি-‌কমিশনের ভোট জালিয়াতি নিয়ে প্রচারাভিযান চালানো হবে। কংগ্রেস চাইছে, এই ইস্যুটি একেবারে বুথ স্তরে পৌঁছে দিতে। ভোট ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করতে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা দলের। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই ‘‌ইন্ডিয়া’ আগামী ১১ আগস্ট‌ সংসদ ভবন থেকে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তর পর্যন্ত মার্চ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ওই দিন বিকেলই কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসছেন।  

ইতিমধ্যেই লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন ‘‌ভোট চুরি’ নিয়ে। বিজেপিকে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতেই কারচুপি করা হয়েছে বলে অবিযোগ বিরোধী নেতারা। ‌কমিশনের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ‌ যে অমূলক নয়, কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা এলাকায় তদন্তচালিয়ে প্রকাশ্যে ‘‌প্রমাণ’‌ দিয়েছেন। রাহুল গান্ধীর ওই দাবি নিয়ে বিরোধী শিবিরও এককাট্টা। ভোট চুরির ইস্যুতে কমিশন ও বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলছেন ইন্ডিয়া শিবিরের নেতারা। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকের পর রাহুল গান্ধী তাঁর বাসভবনে নৈশভোজে উপস্থিত ইন্ডিয়া শিবিরের নেতাদের সামনে বিজেপির ‘‌ভোট চুরি’‌-‌ নিয়ে বিস্তারিত ‘‌প্রেজেন্টেশন’‌ দেন। শুক্রবার কর্ণাটকে ভোট চুরির বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে সহ দলের শীর্ষ নেতারা। নির্বাচন কমিশনের কাছে এদিনও ফের রাহুল চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন। তিনি পাঁচ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন কমিশনের উদ্দেশে। রাহুলের অভিযোগ, ভোটচুরি শুধুমাত্র নির্বাচনী কেলেঙ্কারি তাই নয়, এই কাজ সংবিধান ও গণতন্ত্রের সঙ্গে বিরাট ধোঁকা দেওয়া কাজ। তাঁর সতর্কবার্তা, ‘‌দেশের এই অপরাধীরা জেনে রাখুন, সময় বদলাবে, সাজা নিশ্চয়ই মিলবে।’‌

এদিন বেঙ্গালুরুর ফ্রিডম পার্কে ‘‌ভোট অধিকার র‌্যালি’‌ আয়োজন করে। পরে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের দপ্তর অভিযান করেন রাহুল। এদিন নির্বাচন কমিশনকে নিশানা করে ৫ প্রশ্ন ছুঁড়েছেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, বিরোধীদের কেন ডিজিটাল ভোটার তালিকা কেন দেওয়া হচ্ছেনা?‌ সিসিটিভি ফুটেজ কেন মুছে ফেলা হচ্ছে?‌ কার কথায় এটা হচ্ছে। ভুয়ো ভোট এবং ভোটার তালিকায় কারচুপি কেন?‌ বিরোধী নেতারা প্রশ্ন তুললেই হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো কেন?‌ রাহুলের পঞ্চম প্রশ্ন, স্পষ্টভাবে বলুক নির্বাচন কমিশন কি বিজেপির এজেন্টে পরিণত হয়েছে?‌ লোকসভার বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, ভারতের গণতন্ত্র অমূল্য - এর চুরির পরিণতি ভয়াবহ হবে। ভোট অধিকার র‌্যালি থেকে রাহুল অভিযোগ করেন, বিজেপি পিছনের দরজা দিয়ে কর্ণাটক সরকার ফেলেছিল। কর্ণাটকের তৎকালীন সরকারকে অর্থবলে চুরি করেছিলে। লোকসভা ভোটেও ভোট চুরি হয়েছে। মহাদেবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের অন্তর্তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে, তা তুলে ধরেন রাহুল। জোর গলায় দাবি করেছেন,‘‌ডিজিটাল ভোটার তালিকা পেলে, আমরা প্রমাণ করে দেব দেশের প্রধানমন্ত্রী ভোট চুরি করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।’‌ অন্যদিকে, রাহুল গান্ধীর অভিযোগের পর বিজেপি বলছে এসআইআর জরুরি। 

আরও পড়ুনঃ ইউটিউব দেখে খুন! প্রেমিকের সঙ্গে মিলে এ কী করলেন যুবতী? সত্য ঘটনায় শিউরে উঠবেন আপনিও 

এদিকে, বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে লোকসভা ভোট এবং তার পরে কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটে নির্বাচন কমিশন কারচুপি করেছে বলে অভিযোগ করেন রাহুল। উদাহরণ দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মহাদেবপুরা বিধানসভার। এক কামরার বাড়িতে বহু ভোটারের নাম থাকার অভিযোগ করেছিলেন তিনি। সেই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে একটি ঘরে ৮০ জন ভোটারের নাম নথিভুক্তির তথ্যপ্রমাণ মিলেছে ‘ইন্ডিয়া টুডে’ ফ্যাক্ট চেক-‌এ। এদিনই দিল্লিতে সংসদ ভবন চত্বরে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন,‘‌গোটা দেশ বলছে, নির্বাচন কমিশন ভাল করে তদন্ত করে দেখুক, তার পরে কোনও প্রতিক্রিয়া দিক। কেউ যখন তাদের প্রমাণ দিচ্ছে, তখন তা খতিয়ে দেখে দেশের মানুষকে জানাক।’‌ রাহুলের ভোট চুরির অভিযোগ নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের শরিক ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সাংসদ মহুয়া মাঝি বলেন,‘‌যদি রাহুল গান্ধী মিথ্যে বলে থাকেন তাহলে কমিশন প্রমাণ দিক। গোটা দেশের সামনে ভোট চুরি নিয়ে প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন রাহুলজি। তথ্য দিয়ে দেখিয়েছেন। ইন্ডিয়া নেতাদের সামনেও প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন। কেন্দ্র সরকারের যদি মনে হয়, রাহুল ভুয়ো অভিযোগ করছেন, প্রমাণ করে দেখাক।’‌ তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন,‘‌ভোট কারচুপি নিয়ে নির্বাচন কমিশনের উপর রাহুল গান্ধীর আক্রমণ তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির এসআইআর-এর উপর দীর্ঘদিনের দাবিকে নিশ্চিত করে। আমরা সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি করছি।’‌ ‌