আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের তিনটি বাড়ির মধ্যে প্রায় চারটির মধ্যে তিনটি পরিবারই এখন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছে, গলা ব্যথা, কাশি, চোখে জ্বালা, মাথাব্যথা ও ঘুমের ব্যাঘাতের মতো উপসর্গে। নাগরিক অংশগ্রহণমূলক সংস্থা লোকাল সার্কেলস (LocalCircles) পরিচালিত এক অনলাইন সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এই সমীক্ষা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের (CPCB) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দীপাবলির পর দিল্লি-এনসিআরের বায়ুতে ২.৫ মাত্রা লাফিয়ে বেড়ে হয়েছে ৪৮৮ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দীপাবলির আগে এই মাত্রা ছিল মাত্র ১৫৬.৬ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটার। অর্থাৎ উৎসবের পর দূষণের মাত্রা বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। বিশেষত দীপাবলির রাত এবং তার পরের সকালেই দূষণের স্তর বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
লোকাল সার্কেলসের এই সমীক্ষা ৪৪,০০০-এরও বেশি দিল্লি, গুরগাঁও, নয়ডা, ফারিদাবাদ ও গাজিয়াবাদের বাসিন্দাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে তৈরি।
ফলাফল অনুযায়ী, ৪২ শতাংশ পরিবার জানিয়েছে, তাদের পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যের গলা ব্যথা বা কাশি দেখা দিয়েছে। ২৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাদের পরিবারের কেউ চোখ জ্বালা, মাথাব্যথা বা ঘুমের অসুবিধায় ভুগছেন। পাশাপাশি ১৭ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তারা শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির মতো সমস্যায় ভুগছেন, যা দূষণের কারণে আরও তীব্র হয়েছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের তথ্য অনুসারে, শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে দিল্লির সামগ্রিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ছিল ২৬১, যা "দুর্বল" (Poor) শ্রেণিতে পড়ে। একদিন আগে এটি ছিল ২৯০। তবে দিল্লির আনন্দ বিহার পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের রেকর্ড ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ—সেখানে AQI ছুঁয়েছিল ৪১৫, যা "গুরুতর" (Severe) শ্রেণির মধ্যে পড়ে।
লোকাল সার্কেলসের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪৪ শতাংশ পরিবার বাইরে বেরোনো কমিয়ে দিয়েছে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার ও পানীয় গ্রহণের দিকে ঝুঁকেছে। একইসঙ্গে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বাসিন্দা জানিয়েছেন, তারা ইতিমধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন অথবা নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন দূষণ-জনিত শারীরিক সমস্যার কারণে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ইতিমধ্যেই ৪০০-এর বেশি, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর নির্ধারিত নিরাপদ মানের প্রায় ২৪ গুণ বেশি। পরিবেশবিদদের মতে, দীপাবলির আতশবাজি, যানবাহনের ধোঁয়া, শিল্পাঞ্চলের নির্গমন এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির খড় পোড়ানো—সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বায়ুর গতি না বাড়লে দূষণ আরও ঘনীভূত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংক্ষেপে, রাজধানী ও সংলগ্ন শহরগুলিতে শীতের শুরুতেই বায়ু দূষণ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সাধারণ নাগরিকের স্বাস্থ্যে—শিশু থেকে বৃদ্ধ, কেউই এই দূষণের বিষাক্ত প্রভাবে রক্ষা পাচ্ছেন না।
