আজকাল ওয়েবডেস্ক: অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলায় শনিবার সকালে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। একাধিক ভক্তের প্রাণ গেল ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে পদপিষ্ট হয়ে। সকালবেলায় একাদশী উপলক্ষে হাজার হাজার ভক্ত মন্দিরে সমবেত হয়েছিলেন, আর সেই ভিড়ের মধ্যেই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।


পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শ্রীকাকুলামের কাশিবুগ্গা শহরের ওই মন্দিরে পদপিষ্ট হয়ে অন্তত নয়জন ভক্তের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে আটজন নারী ও একজন কিশোর। আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন বা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। আহতদের দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।


রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একাদশীর পুণ্য তিথি এবং কার্তিক মাসের মিলিত প্রভাবে ভক্তদের বিপুল ভিড় হয়েছিল মন্দিরে। সাধারণত প্রতি শনিবার মন্দিরে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ জনের সমাগম হয়, কিন্তু শনিবার সংখ্যাটা ছিল কয়েক গুণ বেশি। এই অতিরিক্ত ভিড়ই দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।


বেঁচে ফেরা অনেক ভক্তের অভিযোগ, মন্দির কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাই এই মৃত্যুর জন্য দায়ী। তাঁদের দাবি, এত বিপুল ভিড়ের পরও মন্দিরে ছিল মাত্র একটি সরু গেট, যেটি দিয়েই প্রবেশ ও প্রস্থান দুটোই করতে হচ্ছিল। এতে হুড়োহুড়ি তৈরি হয়। আরও জানা গেছে, ভিড়ের মধ্যে হঠাৎই মন্দিরের গেট খোলা হলে একদল বেরোনোর সময় অপরদল ঢোকার চেষ্টা করে, ফলে ধাক্কাধাক্কির মধ্যে একটি স্টিলের রেলিং ভেঙে পড়ে এবং বহু মানুষ তার নিচে চাপা পড়ে যান। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “যদি প্রবেশ ও প্রস্থান আলাদা পথে হত, তাহলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।”


পুলিশ আধিকারিক কে. ভি. মহেশ্বর রেড্ডি জানান, “ভিড়ের মধ্যে কেউ হঠাৎ একটা শব্দ শুনে ভয় পেয়ে যায়। মানুষ আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াতে শুরু করে। এতে অনেকে ছ’ফুট উঁচু জায়গা থেকে পড়ে যান, একে অপরের ওপর পড়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়।”


তিনি আরও জানান, মন্দির কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছ থেকে কোনো নিরাপত্তা অনুমতি নেয়নি, যদিও এত বড় জমায়েতের জন্য তা বাধ্যতামূলক। জেলার অন্যান্য বড় মন্দিরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল, কিন্তু কাশিবুগ্গার ওই ব্যক্তিমালিকানাধীন মন্দিরে তা ছিল না। মন্দিরের মালিক মুকুন্দ পান্ডা অনুমোদন ছাড়াই মন্দিরটি নির্মাণ ও চালু করেছিলেন বলে অভিযোগ।


রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভঙ্গলাপুড়ি অনিতা জানিয়েছেন, ভিড়ের সময় একটি রেলিং ভেঙে পড়াতেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। আহত ৩০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অনেকেই শ্বাসকষ্ট ও হাড় ভাঙার চোটে ভুগছেন। চিকিৎসকরা জানান, আহতদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।


মন্ত্রী নারা লোকেশ হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজখবর নেন। তিনি ঘোষণা করেন, প্রতিটি মৃত ব্যক্তির পরিবারের হাতে রাজ্য সরকার থেকে ১৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, আর আহতদের প্রত্যেককে ৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘটনাটিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে কেন্দ্রীয় আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছেন।


অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “মন্দির কর্তৃপক্ষ যদি আগে থেকেই পুলিশকে জানাত, তবে এই বিপর্যয় এড়ানো যেত।” মুখ্যমন্ত্রী আহতদের সঠিক চিকিৎসা ও ত্রাণ তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গোটা রাজ্যজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ভক্তদের প্রাণহানিতে কাশিবুগ্গা এখন শোকাবহ নীরবতায় আচ্ছন্ন।