আজকাল ওয়েবডেস্ক: মানবচালকবিহীন যুদ্ধবিমান বা Autonomous Fighter Jets হল এমন এক প্রযুক্তি, যেখানে বিমানের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, উন্নত সেন্সর ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটারের হাতে থাকে। এসব বিমান মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই আকাশে উড়ান, যুদ্ধ, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম। জাপান ঘোষণা করেছে, তারা ২০৩৫ সালের মধ্যে এমন স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধবিমান মোতায়েন করবে, যা যুদ্ধ মোকাবিলায় তাদের প্রতিরক্ষা শক্তি আরও বাড়াবে।


আকাশযুদ্ধে স্বয়ংক্রিয়তার প্রভাব
সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধবিমান মানুষের তুলনায় অনেক দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। AI সিস্টেম মুহূর্তের মধ্যেই শত্রুর বিপদ বিশ্লেষণ করে আক্রমণ বা প্রতিরক্ষার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এর ফলে পাইলটের ঝুঁকি কমে যায়, কারণ বিপজ্জনক মিশনে মানুষকে পাঠানোর প্রয়োজন থাকে না। এসব বিমান স্বয়ংক্রিয়ভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে এবং শত্রুকে বিভ্রান্ত করতে বা অগ্রবর্তী অঞ্চলে নজরদারি চালাতে পারে।


মূল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন
এই যুদ্ধবিমানের কার্যকারিতা নির্ভর করে তিনটি মূল উপাদানের ওপর—AI-নির্ভর ফ্লাইট কন্ট্রোল, সেন্সর ফিউশন ও সুরক্ষিত যোগাযোগ ব্যবস্থা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রাডার, ক্যামেরা ও অন্যান্য সেন্সর থেকে প্রাপ্ত লক্ষ লক্ষ তথ্য এক মুহূর্তে বিশ্লেষণ করতে পারে, যা মানুষের জন্য প্রায় অসম্ভব। উন্নত উপাদান ও ইঞ্জিন প্রযুক্তি—যেমন ভারতের নিজস্ব উন্নয়নাধীন AMCA—এসব বিমানে গতি, গোপনীয়তা, এবং অতিসোনিক গতিশক্তি এনে দেয়। জাপান ইতিমধ্যে তাদের মানববিহীন যুদ্ধবিমান প্রকল্পে AI এবং ফ্লাইট কন্ট্রোল প্রযুক্তিতে ২৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।


সামরিক কৌশল ও অর্থনৈতিক প্রভাব
স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধবিমান ব্যবহারে পাইলট প্রশিক্ষণের খরচ অনেক কমবে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে মানবজীবনের ঝুঁকি হ্রাস পাবে। এসব বিমান দূরবর্তী নিরাপদ স্থান থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যা সামরিক কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের স্বয়ংক্রিয় বিমান বাজারের আকার ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, এসব উন্নত বিমানের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার শুরু করার আগে নতুন যুদ্ধনীতি, নিরাপত্তা প্রোটোকল ও নির্ভরযোগ্যতার কঠোর পরীক্ষা প্রয়োজন হবে।


যদিও প্রযুক্তি দ্রুত এগোচ্ছে, পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়তার পথে এখনও কিছু বড় বাধা রয়ে গেছে—যেমন সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি, নৈতিক প্রশ্ন এবং AI-এর সিদ্ধান্তগ্রহণে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা। 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যেই নিজস্ব স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধবিমান প্রকল্পে কাজ করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের MQ-28 Ghost Bat ও যুক্তরাজ্যের BAE Systems Tempest বিশেষভাবে আলোচিত। ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের বহু বিমানবাহিনীতে এই ধরনের স্বয়ংক্রিয় বা দূরনিয়ন্ত্রিত বিমান যুক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা আকাশযুদ্ধের ধারণাকেই পাল্টে দেবে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই খাতে শীর্ষে রয়েছে, এবং ২০৩০ সালের মধ্যেই বাজারের প্রবৃদ্ধি দ্রুতগতিতে বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস।


যদি সব পরিকল্পনা সফল হয়, তবে ২০৩৫ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় যুদ্ধবিমান বিশ্ব সামরিক কৌশলে এক বিপ্লব ঘটাবে। দ্রুত প্রতিক্রিয়া, ঝুঁকি হ্রাস ও উন্নত সমন্বয়ের মাধ্যমে যুদ্ধ ও প্রতিরক্ষার চিত্র পাল্টে যাবে। তবে প্রযুক্তির পাশাপাশি মানব নিয়ন্ত্রণ ও নৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করাটাই হবে ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।