আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের দেখানো পথেই এবার আফগানিস্তান। এবার আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানমুখী নদীতে বাঁধ তৈরি ও জলপ্রবাহ সীমীত করার পরিকল্পনা করছে তালিবার সরকার। এমনই জানিয়েছে আফগান তথ্য মন্ত্রক। তালিবান-শাসিত আফগানিস্তান "যত দ্রুত সম্ভব" কুনার নদীর উপরে একটি বাঁধ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন তালিবানদের সুপ্রিম লিডার মাওলাভি হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। সম্প্রতি যুদ্ধে জড়িয়েছিল এই দুই পড়শি দেশ। তার পর পরই এই কড়া পদক্ষেপের পথে আফগান সরকার। 

গত এপ্রিলে পেহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানকে শায়েস্তা করতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে ভারত। যার মধ্যে অন্যতম হল ভারতের পক্ষে সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করা। এর ফলে পাকিস্তানের কাছে জল দিতে আর বাধ্য নয় ভারত। যার ফলে পাকিস্তান জল কষ্টে ভুগতে শুরু করেছে। 

এবার ভারতের দেখাদেখি কৌশলই অবলম্বন করছে আফগানিস্তান। তালিবানরা কুনার নদীর জল আর পাকিস্তানকে দিতে রাজি নয়। ফলে সেদেশে জলকষ্ট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা। একদিকে ভারত, অন্যদিকে আফগানিস্তান, এই দুই পড়শির কৌশলী সিদ্ধান্তে আপাত তাই বিরাট ফাঁপড়ে ইসলামাবাদ।

আফগানিস্তানের জল ও জ্বালানি মন্ত্রক জানিয়েছে যে, সর্বোচ্চ নেতা আখুন্দজাদা মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কুনার নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ শুরু করার এবং দেশীয় কোম্পানিগুলির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের। তথ্য উপমন্ত্রী মুহাজের ফারাহি বৃহস্পতিবার এক্স-পোস্ট এই কতা জানিয়েছেন।

লন্ডন-ভিত্তিক আফগান সাংবাদিক সামি ইউসুফজাই বলেন, "ভারতের পর, এখন আফগানিস্তানের পালা, পাকিস্তানে জল সরবরাহ সীমিত করার...।" সামি ইউসুফজাইয়ের মতে, সর্বোচ্চ নেতা বিদেশি কোম্পানির জন্য অপেক্ষা না করে দেশীয় আফগান কোম্পানিগুলির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছেন।"

৪৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুনার নদীটি উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। কুনার নদী নাঙ্গারহার প্রদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় প্রবেশ করেছে, যেখানে এটি জালালাবাদ শহরের কাছে কাবুল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। পাকিস্তানে কুনারকে চিত্রাল নদী বলা হয়।

কাবুল নদী (কুনার কাবুল নদীতেই মিশেছে) হল আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যেকার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে বিশাল আন্তঃসীমান্ত নদী। কাবুল নদী অ্যাটকের কাছে সিন্ধু নদে মিলিত হয় এবং পাকিস্তানের, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সেচ এবং অন্যান্য জলের চাহিদার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুনার নদীর জল প্রবাহ হ্রাসের ফলে সিন্ধু নদীর উপর তীব্র প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা। যার ফলে পাঞ্জাবেও এর প্রভাব পড়বে।

২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে, তালিবানরা- আফগানিস্তানের জল সার্বভৌমত্বের দাবিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তারা দেশের নদীর মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন, সেচ ব্যবস্থায় উন্নতি চাইছে। ফলে প্রতিবেশী দেশগুলির উপর নির্ভরতা কমাতে বাঁধ নির্মাণ এবং জলবিদ্যুৎ উন্নয়নের পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করেছে।

এছাড়াও, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের কোনও আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক জল-বণ্টন চুক্তি নেই। আফগানিস্তানের জল সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য তালিবানদের পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসলামাবাদ। শরীফ সরকার আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল যে, পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মধ্যে এই ধরনের একতরফা পদক্ষেপ আঞ্চলিক জল সংকটকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে।

ভারত-আফগানিস্তান জলবিদ্যুৎ ও বাঁধ বিষয়ে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি: 
আফগানিস্তানের তালিবান বিদেশমন্ত্রী মাওলাভি আমির খান মুত্তাকি সম্প্রতি ভারত সফর করেছেন। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেছেন। তার এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রকাশ্যে পাকিস্তান বিরোধী আফগানদের কড়া পদক্ষেপ।

মুত্তাকি ওজয়শঙ্কেরর যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,"হেরাতে ভারত-আফগানিস্তান মৈত্রী বাঁধ (সালমা বাঁধ) নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে নয়াদিল্লির সহায়তার প্রশংসা করে, উভয় পক্ষ টেকসই জল ব্যবস্থাপনার গুরুত্বের উপরও জোর দিয়েছে এবং আফগানিস্তানের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এবং এর কৃষি উন্নয়নকে সমর্থন করার লক্ষ্যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিতে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।"  

বছরের পর বছর ধরে, ভারত এবং আফগানিস্তান স্থলবেষ্টিত দেশ জুড়ে জল সুরক্ষা, সেচ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পিত যুগান্তকারী পরিকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের জলবিদ্যুৎ ও জ্বালানি সহযোগিতা জোরদার করেছে।

এই অংশীদারিত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সালমা বাঁধ (আনুষ্ঠানিকভাবে আফগান-ভারত মৈত্রী বাঁধ) যা ২০১৬ সালে হেরাত প্রদেশে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নে সম্পন্ন হয়। এই বাঁধ ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এবং ৭৫,০০০ হেক্টর জমিতে সেচের সুবিধা প্রদান করে। এর ফলে আফগানিস্তানের আমদানিকৃত বিদ্যুতের উপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।

এর উপর ভিত্তি করে, কাবুল নদীর একটি উপনদী ময়দান নদীর উপর শাহতুত বাঁধটি ২০২১ সালের একটি সমঝোতা স্মারকের আওতায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যার মাধ্যমে ভারতের ১৪৭ মিলিয়ন ঘনমিটার জল সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি ছিল। এটি কাবুলের ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করবে এবং কৃষিকাজের জন্য ৪,০০০ হেক্টর আধা-শুষ্ক জমিতে সেচের বন্দোবস্ত করবে।