আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার গাজা উপত্যকায় “জোরালো হামলার” নির্দেশ দিয়েছেন, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলার পর। এই পদক্ষেপে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।


ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, নেতানিয়াহুর নির্দেশে মঙ্গলবার ভোর থেকে গাজা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিমান ও আর্টিলারি হামলা শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিমানগুলো হামাসের অবস্থান, অস্ত্রভান্ডার ও সুড়ঙ্গপথ লক্ষ্য করে একাধিক হামলা চালায়। ইজরায়েলি সেনা মুখপাত্র জানিয়েছেন, “হামাস আবারও যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে রকেট হামলা চালিয়েছে। এর জবাবেই এই প্রতিরোধমূলক অভিযান।”


প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, “ইজরায়েল শান্তি চায়, কিন্তু যারা আমাদের নাগরিকদের আক্রমণ করে তাদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল হব না। গাজায় হামাসের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ককে আমরা ধ্বংস করব।” তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিরতির সুযোগে হামাস নতুন করে অস্ত্র মজুত করছে এবং সীমান্ত এলাকায় উসকানিমূলক কার্যকলাপ চালাচ্ছে।

আরও পড়ুন: মান্থা-র খেলায় বিপর্যস্ত অন্ধ্রপ্রদেশ, ঘন্টায় গতিবেগ ১১০ কিমি, জারি চরম সতর্কতা


অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ইজরায়েলি হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত এবং ৭৫ জনেরও বেশি আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলার বেশিরভাগই আবাসিক এলাকায় হয়েছে, ফলে সাধারণ মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।


হামাস মুখপাত্র ফাওজি বরহুম ইজরায়েলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “হামাস কোনো যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেনি। ইজরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে নতুন আক্রমণের অজুহাত তৈরি করছে।” তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান যাতে তারা “ইজরায়েলি আগ্রাসন” বন্ধে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করে।


জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঘটনাটির নিন্দা জানিয়ে উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানান। তাঁর বক্তব্যে বলা হয়েছে, “নাগরিকদের প্রাণহানি ঠেকানো ও মানবিক সাহায্য নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে জরুরি।” যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই ঘটনার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং শান্তি আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছে।


গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করেছেন। চলতি সংঘাতের কারণে বিদ্যুৎ, জল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট চরমে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, হাসপাতালগুলো আহত রোগীতে পরিপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ও জ্বালানি প্রায় শেষ।


বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নতুন হামলা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়াকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। এক সপ্তাহ আগেই কাতারের মধ্যস্থতায় ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে যে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল, সেটি ছিল মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। কিন্তু মঙ্গলবারের হামলার পর সেই উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “যতক্ষণ না হামাস সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হচ্ছে, ততক্ষণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।” অপরদিকে, গাজার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “আমরা প্রতিদিন মৃত্যু আর ধ্বংসের ভয় নিয়ে বাঁচছি।”


ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর নির্দেশে মঙ্গলবার গাজায় নতুন করে বিমান হামলা শুরু হয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগে এই আক্রমণ চালানো হলেও, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে এটি ইজরায়েলের পরিকল্পিত আগ্রাসন। পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মহল সংযম ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।