আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাশিয়ার দু'টি বৃহত্তম তৈল সংস্থার উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা। এরপরই তীব্র পতিক্রিয়া জানালেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর সাফ ঘোষণা, মস্কো কখনই ওয়াশিংটন বা অন্য কোনও দেশের চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। এছাড়াও তাঁর হুঙ্কার, রাশিয়ার ভূখণ্ডের যেকোনও হামলার জবাব "অত্যন্ত গুরুতর এবং অপ্রতিরোধ্য" হবে। পুতিন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে "শত্রুতাপূর্ণ কাজ" বলে অভিহিত করেছেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপ রুশ-মার্কিন সম্পর্ককে পোক্ত করবে না বলেই মনে করেন প্রেসিডেন্ট।

পুতিনের দাবি, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে রাশিয়ার অর্থনীতির উপরে তেমন কোনও প্রভাব পড়বে না। কারণ, বিশ্বের তেল বাজারে রাশিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। রাশিয়ার থেকে তেল না গেলে বিশ্ব বাজারে চড়চড়িয়ে জ্বালানির দাম বাড়বে। আখেরে আমেরিকার মতো দেশগুলিরই ঘুম ছুটিয়ে দেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কথায়, "অবশ্যই রাশিয়ার উপরে চাপ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্ত আত্মসম্মান থাকা কোনও দেশ বা আত্মমর্যাদাশীল কোনও মানুষ চাপের মুখে কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন না।' পালটা ট্রাম্প বলেছেন, 'আমি আনন্দিত যে ওঁর এরকম মনে হয় না। খুব ভাল। ছয় মাসের মধ্যে এই বিষয়ে আপনাদের আমি জানিয়ে দেব।'

রাশিয়া বৃহৎ আকারের পারমাণবিক প্রশিক্ষণ মহড়া পরিচালনা করেছে। এরপরই বুধবার রাতের দিকে আমেরিকা ঘোষণা করে যে, রুশ তেল সংস্থা 'রোসনেফট' এবং 'লুকোয়েল'-এর উপরে নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইতি টানতে মস্কোর উপরে চাপ তৈরি করতেই এমন পদক্ষেপ করেছে আমেরিকা। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লিভিটের দাবি, শান্তির ক্ষেত্রে পুতিনদের সেরকম কোনও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু তারপরও পুতিন এবং ট্রাম্পের বৈঠক হতে পারে। উল্লেখ্য, এই নিষেধাজ্ঞা চাপানোর আগেই ওয়াশিংটন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষ সম্মেলনের পরিকল্পনা বিলম্বিত করেছিল।

বিশ্বের মোট তেলের পাঁচ শতাংশের বেশিই আসে ওই দু'টি (রোসনেফট এবং লুকোয়েল) রাশিয়ান সংস্থা থেকে। সেই পরিস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞার জেরে সাময়িকভাবে রাশিয়া ধাক্কা খাবে। কিন্তু দীর্ঘকালীন সময় বিভিন্ন পশ্চিমী দেশগুলিও ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আমেরিকার থেকে ইউক্রেন, দূরপাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র পেয়েছে। যা ব্যবহার করতে পারে জেলেনস্কি বাহিনী। টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নিশানা করতে পারে। এমন রিপোর্ট নিয়ে জল্পনা চলছে। য়ার প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, "এটি উত্তেজনা বৃদ্ধির একটি প্রচেষ্টা। কিন্তু যদি রাশিয়ার ভূখণ্ডে আক্রমণ করার জন্য এই ধরণের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, তাহলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া হবে অত্যন্ত গুরুতর। এবার ওদের এ বিষয়টি নিয়ে ভাবতে দিন।"

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে স্বল্পকালীন মেয়াদে চীনের বিভিন্ন তেল সংস্থা, রাশিয়ার থেকে তেল কেনা স্থগিত করে দিতে পারে বলে অনুমান। একইভাবে ভারতের বিভিন্ন সংস্থাও তেল কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। যদিও বিষয়টি নিয়ে ভারতের তরফে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি।

ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা আমদানির উপর ইতিমধ্যে বিদ্যমান ১৫৫ শতাংশ শুল্কের উপরে অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন। ভারতও ট্রাম্পের শুল্কের শিকার। ভারতীয় পণ্যের উপর ওয়াশিংটন ৫০ শতাংশ শুল্কে আরোপ করেছে। আসলে ট্রাম্প এশিয়ার  প্রধান দুই অর্থনীতির দেশের উপর চাপ প্রয়োগ করে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে মরিয়া। চীন প্রতিশোধ হিসেবে একই ধরণের পদক্ষেপ করার  হুঁশিয়ারি দিলেও, ভারত স্পষ্টভাবে বলেছে যে- নয়াদিল্লি দেশের জনগণের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করবে না।

তবে, কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে- আমেরিকা ভারতীয় পণ্যের উপর ১৫-১৬ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে আনতে পারে। ফলে ভারত রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করতে পারে।

মজার বিষয় হল, ট্রাম্পের প্রধান শুল্ক আরোপ বিশ্ব অর্থনীতিতে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এখনও অবসান ঘটেনি।