কৌন বনেগা ক্রোড়পতি ১৭'-তে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ঈশিত ভাটের উপস্থিতি নিয়ে সরগরম সমাজমাধ্যম। শো-এর সঞ্চালক অমিতাভ বচ্চনের প্রতি গুজরাতের গান্ধীনগরের ঈশিতের অতি-আত্মবিশ্বাসী এবং জেদি আচরণ দর্শক মহলের একাংশের কাছে কুরুচিকর এবং অসম্মানজনক বলে মনে হয়েছে। যা থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। এই ঘটনা সমাজে অভিভাবকত্ব ও সৌজন্যবোধ নিয়ে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন 'নতুন প্রজন্মকে কি অতিরিক্ত মমতা দিয়ে এমনভাবে বড় করা হচ্ছে যে তারা দায়িত্বহীন আচরণের মাধ্যমে সবকিছু দাবি করতে শিখছে!'
মনোবিদদের মতে, স্বতঃস্ফূর্ত হোক বা রিয়েলিটি শো-এর জন্য পরিকল্পিত, একটি শিশু যদি এত আত্মবিশ্বাস দেখায় এবং সেটিকে যদি অসাধারণ হিসেবে উদযাপন করা হয়, তাহলে সন্তানকে বড় করার পদ্ধতিতে ত্রুটি থাকতে পারে। কারণ শিশুকে অতিরিক্ত স্নেহ, আদর দিয়ে বড় করলে সে অনেক সময়ে সবকিছুই করা যায় বলে মনে করে বসে। চিকিৎসার পরিভাষায় এটাই হচ্ছে ‘সিক্স-পকেট সিনড্রোম’।”
সাইকিয়াট্রিস্ট ডঃ রাজীব মেহতার কথায়, ১২ বছরের কম বয়সের অনেক শিশু তাদের দাবি পূরণ না হলে রেগে যায়, এমনকী শারীরিকরূপে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই ধরনের আচরণ তখন দেখা দেয় যখন বাবা-মা সবকিছু পূরণ করেন এবং সন্তানের প্রত্যাশা মেনে নেন। সেক্ষেত্রে শিশু কোনও প্রত্যাখ্যানে অভ্যস্ত হয় না। তাই কোনও দাবি পূরণ না হলে তারা মানসিক সংকটে পড়ে। এটি কখনও কখনও শিশুকে ‘ডিসোসিয়েটিভ কনভালসিভ ডিসঅর্ডার’-এর দিকেও নিয়ে যায়, যা মানসিক বা আবেগীয় কারণে হয়।
সিক্স-পকেট সিনড্রোম কী? চীনের এক নীতি থেকে উদ্ভূত এই ধারণা অনুযায়ী, একটি শিশুর চারপাশে ছয়জন প্রাপ্তবয়স্ক থাকে। দু'জন বাবা-মা এবং চারজন দাদা-দিদি। তারা শিশুকে সব সময় যত্ন ও মনোযোগ দিয়ে বড় করে তোলে। ভারতেও শহুরে পরিবেশে, বিশেষ করে কর্মরত বাবা-মা এবং দাদা-দিদিকে নিয়ে পরিবারে প্রায় একই অবস্থা লক্ষ্য করা যায়। যেখানে বাবা-মা সাধারণত সন্তানকে কম সময় দেওয়ায় অনুশোচনায় ভোগেন এবং শিশুকে কোনও কষ্টে রাখতে চান না। অর্থের প্রভাব শিশুকে সব চাহিদা পূরণের সুযোগ দেয়। ফলে শিশুর কাছে প্রত্যাখ্যান বা ব্যর্থতা অজানা থেকে যায়। এভাবেই শিশুর মধ্যে 'দাবি করার অধিকার' জন্মায়। পরিবারে দাদা-দিদিও শিশুর এই স্বাভাবিক বয়ঃসীমার আগ্রাসী ও আত্মবিশ্বাসী আচরণকে 'কিউট' মনে করেন। শিশুটি মনে করতে শুরু করে যে তার কথা সারা বিশ্ব শুনতে বাধ্য। যখন এই শিশুরা কৈশোরে পৌঁছয়, তখন তাদের সামাজিক আচরণ পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
*শিশুর বাইরের সকলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়।
*বাবা-মা শিশুর জীবনের সমস্ত দিক পরিকল্পনা করে অতিরিক্ত ক্লাস, বন্ধু নির্বাচন, সামাজিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
*শিশুর মস্তিষ্কের সমস্যা সমাধানে, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ থাকে না। ফলে সক্ষমতা ও স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়।
*বাস্তবতার মুখোমুখি হলে শিশুরা পরিবারকে দোষ দেয়।
*কিশোর বয়সে সামাজিক সম্পর্ক গড়তে অক্ষম হয়, রাগের কারণে দাম্পত্যে সমস্যা বাড়তে পারে, অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করতে পারে।
অভিভাবকদের কী করা উচিত
শিশুর কোনও কাজের সঙ্গে পুরস্কার যুক্ত রাখতে পারেন যাতে খুদে বুঝতে পারে সে কোনও কিছু অর্জন করেছে।
শিশুদের ঘর পরিষ্কার, কাপড় গুছানো, প্লেট ধোয়া ইত্যাদি দায়িত্ব দিতে পারেন।
শিশুদের সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করানো উচিত যাতে তারা শেখে ভিন্ন মানুষের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হয়।
অতিরিক্ত স্নেহে সন্তানের সব চাহিদা পূরণ করা উচিত নয়।
