দৃষ্টিহীনদের জীবনে আশার আলো জ্বালাতে পারে সোনার কণিকা! সম্প্রতি এসিএস ন্যানো নামের একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চমকে দেওয়া তথ্য। ‘গোল্ড ন্যানোপার্টিকল’ বা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সোনার কণিকা ইনজেকশনের মাধ্যমে চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। তাও আবার অস্ত্রোপচার ছাড়াই। নয়া গবেষণার এই ফলাফল চমকে দিয়েছে চিকিৎসক মহলকে।
গবেষণাটি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ব্রাউন ইউনিভার্সিটি। তারা জানিয়েছেন, সোনার এই ক্ষুদ্র কণিকাগুলি মানুষের চুলের চেয়েও হাজার গুণ পাতলা। রেটিনা নষ্ট হওয়া ইঁদুরের চোখে এই কণিকা ইনজেকশন দেওয়ার পর তাদের দৃষ্টিশক্তি আংশিকভাবে ফিরে এসেছে।
আরও পড়ুনঃ প্রায়ই পার্লারে গিয়ে শ্যাম্পু করেন? সাবধান! ছোট্ট একটি ভুলেই বাড়চ্ছে বিরল স্ট্রোকের ঝুঁকি
কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি? গবেষকরা জানিয়েছেন, সোনার ন্যানোকণিকাগুলো ইনফ্রারেড আলোয় সক্রিয় হয়ে ওঠে। সুস্থ চোখের রেটিনা যেভাবে আলোকে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত করে, এই কণিকাগুলোও ঠিক সেই কাজটাই করে। ফলে মস্তিষ্ক সেই সংকেতকে দৃশ্য হিসেবে বুঝতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে চোখে সোনার কণিকা ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপর রোগীকে বিশেষ ইনফ্রারেড লেজার চশমা(গগলস) পরানো হয়, যা আলো পাঠিয়ে সেই কণিকাগুলোকে সক্রিয় করে। সক্রিয় কণিকাগুলি আলোকে বৈদ্যুতিক সিগনালে পরিণত করে, যা মস্তিষ্কে গিয়ে দৃষ্টি-সংকেত হিসেবে কাজ করে।

অন্ধত্ব চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে এই গবেষণা। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে বয়সজনিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (এএমডি)–এর মতো রোগের চিকিৎসায় বিপ্লব আনতে পারে। এখনও পর্যন্ত প্রচলিত চিকিৎসা এএসডি-র অগ্রগতি থামাতে পারে, কিন্তু হারানো দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে পারে না। নতুন এই প্রযুক্তি সেই সীমাও ভাঙতে পারবে বলে আশা গবেষকদের।
এবিষয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক এক বিখ্যাত ওয়েবসাইট জানিয়েছে, যদি এটি মানবদেহে কার্যকর প্রমাণিত হয় তাহলে এটি হতে পারে একটি ন্যূনতম আক্রমণাত্মক রেটিনাল প্রোস্থেসিস বা কৃত্রিম রেটিনা যেখানে অস্ত্রোপচার, জিন থেরাপি বা জটিল ইমপ্ল্যান্টের দরকার হবে না।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গবেষণা এখনও পরীক্ষানিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। অর্থাৎ মানুষের ওপর পরীক্ষা শুরু হয়নি। শুধুমাত্র ইঁদুরের ওপর এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে। তাই এটি মানবদেহে কতটা নিরাপদ, কতটা কার্যকর, এবং দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব কী হবে, তা জানার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে এটি কার্যকর হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বিপ্লব ঘটতে পারে তা বলাই বাহুল্য!
