শরীর সুস্থ রাখতে প্রোটিন অপরিহার্য। এটি শুধু পেশি নয়, চুল, ত্বক, হরমোন, এমনকী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গঠনেরও মূল উপাদান। কিন্তু বর্তমান সময়ে অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি ঝোঁক, অপুষ্টির কারণে অনেকের শরীরেই প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয়। চিকিৎসকদের মতে, এই ঘাটতি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে তা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে।

আসলে প্রোটিন শুধু শরীরের গঠন নয়, শরীরের শক্তির মূলভিত্তি। তাই নিয়মিত সুষম খাবর খান এবং শরীরের ছোট পরিবর্তনগুলোকে গুরুত্ব দিন। চিকিৎসকদের মতে, প্রোটিন ঘাটতি উপেক্ষা করলে তা ভবিষ্যতে বড় অসুখের কারণ হতে পারে।

কেন হয় প্রোটিনের ঘাটতি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রোটিনের অভাবের প্রধান কারণ হল দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকা। নিরামিষভোজীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায় কারণ তাঁদের প্রোটিনের উৎস সীমিত। আবার যাঁদের অন্ত্রে শোষণজনিত সমস্যা যেমন সিলিয়াক ডিজিজ বা ক্রোন রোগ থাকে, তাঁদের শরীর প্রোটিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না।যকৃত বা কিডনিজনিত সমস্যা থাকলেও রক্তে প্রোটিনের মাত্রা কমে যেতে পারে। গর্ভবতী মহিলা বৃদ্ধ বা অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে শরীরের প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে যায়। যদি সেই পরিমাণ মেটানো না যায়, ঘাটতি দ্রুত দেখা দেয়।

আরও পড়ুনঃ ঘ্রাণশক্তি বলে দেবে আপনি কতদিন বাঁচবেন! আয়ুর গোপন সংকেত নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য বিজ্ঞানীর

শরীরে প্রোটিনের ঘাটতির লক্ষণ

১. পেশি দুর্বলতা ও ভাঙন: প্রোটিনের অভাবেো শরীর শক্তিহীন হয়ে যায়, হাঁটাচলা বা ভার তুলতে কষ্ট হয়।

২. চুল, ত্বক ও নখে সমস্যা: চুল পড়া, নখ ভাঙা, ত্বক শুষ্ক বা নিস্তেজ হয়ে পড়া প্রোটিন ঘাটতির স্পষ্ট লক্ষণ।

৩. শরীরে ফোলা বা জল জমা (এডিমা): রক্তে প্রোটিন কম থাকলে দেহে তরল জমে হাত-পা বা মুখে ফোলা দেখা দেয়।

৪. অসুস্থতা বা সংক্রমণ বার বার হওয়া: প্রোটিন ইমিউন সিস্টেমকে শক্ত রাখে। এর অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়।

৫. ক্ষত বা আঘাত সারতে দেরি হওয়া: প্রোটিন টিস্যু মেরামতে সাহায্য করে। তাই ক্ষত বা আঘাত সারতে দেরি হয়। 

৬. অতিরিক্ত খিদে ও মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে: শরীর শক্তির ঘাটতি পুষিয়ে নিতে ক্রমাগত খাবার চায়।

৭.  মুড সুইংঃ প্রোটিন থেকে তৈরি অ্যামিনো অ্যাসিড সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মতো ‘হ্যাপি হরমোন’ তৈরিতে সাহায্য করে। এর অভাবে মুড খারাপ বা মানসিক ক্লান্তি দেখা দেয়।

কীভাবে প্রোটিনের ঘাটতি মিটবে

*দৈনন্দিন খাবারে ডিম, দুধ, মাছ, মুরগির মাংস, পনির, ডাল, সয়াবিন, ছোলা ও বাদাম রাখুন।

*নিরামিষভোজীরা ডাল ও শস্য একসঙ্গে খেলে সম্পূর্ণ মাত্রায় প্রোটিন পাবেন।

*পর্যাপ্ত জল পান করুন এবং ফাস্ট ফুড বা অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে দিন।

*যাঁদের কিডনির সমস্যা আছে, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রোটিনের পরিমাণ ঠিক করুন।

*শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের সঙ্গে প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে তা পেশি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।