করলা স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী, তা প্রায় সকলেই জানেন। এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। তবে এর তেতো স্বাদ অনেককে এটি খাওয়ার থেকে বিরত রাখে। কিন্তু কিছু সহজ উপায়ের মাধ্যমে করলার তেতো স্বাদ কমিয়ে এর সব স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ভোগ করা সম্ভব। জেনে নেওয়া যাক কীভাবে তা করা যায়।

করলার মধ্যে ‘মোমোরডিসিন’ নামের একটি প্রাকৃতিক উপাদান থাকে, যা করলাকে তিক্ত স্বাদ দেয়। এই তিক্ততা মূলত করলার খোসা এবং বীজে বেশি থাকে। এই যৌগগুলো সরিয়ে বা নিরপেক্ষ করে তেতো স্বাদ কমানো যায়। এর জন্য করলার উপরের খসখসে সবুজ স্তরটি ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে সরিয়ে ফেলুন। অধিকাংশ কষ্ঠস্বাদ এই স্তরে থাকে।

এরপর একটি প্যানে জল ফুটিয়ে তাতে এক চামচ নুন মেশান এবং কম আঁচে দু’তিন মিনিট রাখুন। তারপর তা সঙ্গে সঙ্গে বার করে বরফের জলে ডুবিয়ে দিন। এই গরম-ঠান্ডা ধাক্কা করলার কষ্ঠস্বাদ অনেকটাই কমিয়ে দেয়।

করলাকে টুকরো করে ম্যারিনেট করার পর তাতে নুন ছিটিয়ে ভাল ভাবে মিশিয়ে নিন। নুনের জল শোষণ করতে করলার টুকরোগুলো ৩০-৪০ মিনিটের জন্য ছিদ্রযুক্ত মাইক্রোওয়েভে রাখুন। এরপর করলাগুলো জল দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে তুলে শুকনো কাপজডে পেঁচিয়ে শুকিয়ে নিন। পরবর্তীতে করলা ভাজার সময় এতে সামান্য কুঁচানো গুড় মেশান। এটি করলার বাকি তেতো স্বাদও কমিয়ে দেয়।

করলার তেতো স্বাদ কমানোর জন্য একটি কাপ জলে দুই বড় চামচ ভিনিগার এবং এক চামচ চিনি মিশিয়ে করলার টুকরোগুলো ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এই মিশ্রণ করলার মিষ্টি এবং তেতো স্বাদের ভারসাম্য রক্ষা করে স্বাদ বাড়ায়।

তেতো স্বাদ কমানোর জন্য করলার টুকরোগুলো লেবুর রস বা ভিনিগারযুক্ত জলে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এতে থাকা অ্যাসিড তিক্ত উপাদানগুলোকে নিরপেক্ষ করে।

করলার কষা স্বাদ অনেকের কাছে অরুচিকর মনে হলেও, এর ভিতরে এমন সব গুণ রয়েছে যা শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য আশ্চর্যজনকভাবে উপকারী। করলায় থাকা প্রাকৃতিক উপাদান শরীরকে ভিতর থেকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং লিভারকে সক্রিয় রাখে। নিয়মিত করলা খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়, ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। অনেক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, করলা রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই শুধুমাত্র এর তেতো স্বাদের কারণে একে দূরে না ঠেলে দিয়ে, সঠিকভাবে রান্না করে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এটি শুধু সুস্থ শরীর নয়, ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনেও সহায়ক।