মেনোপজ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই শব্দের সঙ্গে অল্প-বিস্তর পরিচিত সকলেই। মেনোপজ বা রজোনিবৃত্তি বলতে সাধারণত মহিলাদের কথাই মনে আসে। তবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হরমোনের পরিবর্তন এবং তার প্রভাব শুধু যে মহিলারাই উপলব্ধি করতে পারেন তা নয়, পুরুষদের শরীরেও এই একই বিষয় লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ পুরুষদের জীবনেও আসে রজোনিবৃত্তির মতো সময়। যাকে বলা হয় অ্যান্ড্রোপজ। পুরুষরাও জীবনের কোনও না কোনও পর্যায়ে এই ‘ঋতুবন্ধের’ শিকার হতে পারেন।
অ্যান্ড্রোপজ আসলে কী
অ্যান্ড্রোপজ হল পুরুষদের মধ্যে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়া। এটি মেনোপজের মতো নয়, যেখানে হঠাৎ হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। বরং এটি ধীরে ধীরে হয়। টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার কারণে শরীর ও মনের নানা পরিবর্তন লক্ষ্য করা
মহিলাদের থেকে কতটা আলাদা
মেনোপজের মতো অ্যান্ড্রোপজ শুধু বয়স বাড়ার উপরেই নির্ভর করে না। মহিলাদের যেমন নির্দষ্ট বয়সের পর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে মেনোপজ হয়েছে বলে ধরা হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে কিন্তু তা নয়। ৩০ বছরের পর থেকে প্রতি বছর পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমতে শুরু করে। অ্যান্ড্রোপজের ধীর গতিতে হয়। ডিম্বাশয় পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লেও শুক্রাশয় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয় না। অল্প মাত্রায় হলেও টেস্টোস্টেরন তৈরি হয়। অনেকের ৪০-৫০ বছরে শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যায়, সঙ্গমের অনীহা দেখা যায়। আবার কেউ সুস্থ শরীরে ৭০ বছরেও বাবা হতে পারেন। তাই বিষয়টা সকলের জন্য এক রকম নয়৷ অর্থাৎ কার কখন অ্যান্ড্রোপজ হচ্ছে তা নির্দিষ্ট করে দিনক্ষণ বলা যায় না।
কী কারণে হয়
ইদানীং অল্প বয়সেই পুরুষদের অ্যান্ড্রোপজ হতে দেখা যাচ্ছে। যার অন্যতম কারণ অনিয়মিত জীবনযাপন, অ্যালকোহল, ধূমপান কিংবা বিভিন্ন ধরনের নেশাদ্রব্য গ্রহণ করা। এছাড়া খুব উষ্ণ জায়গায় কাজ করা, খুব টাইট অন্তর্বাস পরা, অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করলেও কম বয়সে অ্যান্ড্রোপজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার ওজন বেশি হলে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, থাইরয়েড, ক্রনিক কিডনির অসুখ, মানসিক অবসাদ, উদ্বেগও অ্যান্ড্রোপজ ডেকে আনে। রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপিও সময়ের আগেই পুরুষদের অ্যান্ড্রোপজের কারণ হতে পারে।

কোন লক্ষণে বুঝবেন
মেনোপজের মতো সরাসরি কোনও লক্ষণ থাকে না। তবে পুরুষদের বেশ কয়েকটি উপসর্গ খেয়াল করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যেমন-
*যৌন জীবনে পরিবর্তনঃ অ্যান্ড্রোপজের কারণে যৌন জীবনে বড় প্রভাব পড়ে। শুক্রাণুর পরিমাণ কমে যায়, মিলনে অনীহা, সঙ্গমের সময়ে সমস্যা হতে পারে।
*মেজাজ পরিবর্তন ও হতাশাঃ ছোটখাটো বিষয়েও রাগ, হতাশা বা উদ্বেগ দেখা দিতে পারে।
*ওজন বেড়ে যাওয়াঃ সার্বিক ওজন বেড়ে যায়। বিশেষ করে কোমর ও পেটে মেদ জমতে শুরু করে।
*হাড় ও পেশির দুর্বলতাঃ হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। সামান্য আঘাতও বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
*ঘুমের সমস্যা – রাতের ঘুম ভাঙা বা পর্যাপ্ত ঘুম না পাওয়া।
কীভাবে সামলাবেন
*পেশি শক্ত রাখা, স্ট্রেস কমানো ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যয়াম করুন। তবে জিমে অতিরিক্ত শরীরচর্চা নয়, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত এক্সারসাইজ করা জরুরি।
*স্বাস্থ্যকর খাবার খান। প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ সমৃদ্ধ খাবার টেস্টোস্টেরন ও শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
*নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম হরমোনের সঠিক নিঃসরণ নিশ্চিত করে।
*ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, থাইরয়েডের মতো রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খান।
*ওজন বাড়তে দিলে চলবে না। অধ্যাধিক ফ্যাট জাতীয় খাবার ডায়েট থেকে বাদ দিন।
*অ্যালকোহল সহ যে কোনও নেশা জাতীয় দ্রব্য বর্জন করুন।
*মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। মন ভাল থাকে এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন।
অ্যান্ড্রোপজের পর কি বাবা হওয়া সম্ভব
অ্যান্ড্রোপজের ক্ষেত্রে যৌন জীবনে সর্বোপরি প্রজনতা ক্ষমতায় জটিলতা আসতে পারে। সন্তানের অনেক রকম জেনেটিক সমস্যার ঝুঁকিও থাকে। তবে অ্যান্ড্রোপজের পুরো প্রক্রিয়াটি ধীর গতিতে হওয়ায় বাবা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বর্তমানে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে এসেছে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাও। সেক্ষেত্রে শুক্রাণুর মান দুর্বল হলেও কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি অর্থাৎ 'আর্টিফিশিয়াল রিপ্রোডাকটিভ টেকনোলজি'-র সাহায্যে বাবা হওয়ার আশা রয়েছে।
