আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রেম নয়, এ যেন আদ্যোপান্ত এক প্রতারণার জাল! আর সেই জালের কারিগর খোদ এক জন পুলিশ প্রধান। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই চক্ষু চড়কগাছ সকলের। জেসন কোলিয়ার নামে ওই পুলিশকর্তার কীর্তিকলাপ হার মানাতে পারে যে কোনও ছবির চিত্রনাট্যকেও।
জানা গিয়েছে, জেসন একই সঙ্গে দু’টি বিয়ে, তিন জনের সঙ্গে বাগদান করেছিলেন। পাশাপশি পনেরোরও বেশি বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন! আশ্চর্যের বিষয় হল, এই মহিলাদের কেউই একে অপরের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আঁচ পাননি। দীর্ঘ দিন ধরেই চলছিল এই লুকোচুরি।
কিন্তু কী ভাবে এত দিন ধরে এই ‘ডবল লাইফ’ বা দ্বৈত জীবন চালিয়ে গেলেন জেসন? তদন্তে নেমে পুলিশকর্তারাও তাজ্জব। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, কোলিয়ার মূলত তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব এবং কথার মারপ্যাঁচকে কাজে লাগাতেন। অভিযোগ, একাধিক মহিলাকে বোকা বানাতে তিনি নির্দ্বিধায় মিথ্যার আশ্রয় নেন। নিজের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতে জাল নথি তৈরি করতেও হাত কাঁপেনি তাঁর। এক মহিলাকে তিনি যে বিবাহবিচ্ছিন্ন এবং নতুন করে সংসার পাততে সম্পূর্ণ প্রস্তুত, তা বোঝাতে ভুয়ো ‘অ্যানালমেন্ট’ বা বিবাহ বাতিলের কাগজপত্রও দেখান বলে অভিযোগ। এই জাল নথির উপর ভরসা করেই ওই মহিলা তাঁর সঙ্গে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
তবে কথায় বলে, সত্য বেশি দিন চাপা থাকে না। জেসনের এই প্রতারণার সাম্রাজ্য হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সামান্য একটি সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে যখন জেসনেরই এক ‘বঞ্চিতা’ প্রেমিকা ফেসবুকে তাঁর সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আনেন। সেই পোস্টটি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এর পরেই যেন ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে অন্যান্য মহিলাদের। একে একে মুখ খুলতে শুরু করেন জেসনের প্রতারণার শিকার হওয়া অন্য মহিলারা। প্রত্যেকেই দাবি করেন, তাঁরা জেসনের সঙ্গে গভীর সম্পর্কে ছিলেন এবং তাঁকেই নিজেদের ভবিষ্যৎ স্বামী হিসাবে ভেবেছিলেন। কিছু দিনের মধ্যেই দুই স্ত্রী, তিন বাগদত্তা এবং অগণিত বান্ধবীর এই অবিশ্বাস্য প্রতারণার জাল গোটা দেশের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসতেই জাতীয় স্তরে হইচই শুরু হয়। জেসনের এই ‘প্রেমলীলা’র খবর সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে চলে আসে। তাঁর পেশাদার জীবন কার্যত ধসে পড়ে। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে তদন্তে নামে টেক্সাস রেঞ্জার্স। খতিয়ে দেখা হয়, জেসন কোনও ভাবে তাঁর পদের অপব্যবহার করেছেন কি না। শেষ পর্যন্ত নিজের পুলিশ প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন কোলিয়ার।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা অনেকগুলো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কীভাবে একজন রক্ষকই ভক্ষক হয়ে উঠলেন? আইনরক্ষকের পদে আসীন এক জন ব্যক্তি কী ভাবে দিনের পর দিন এমন জটিল এবং বহুমাত্রিক প্রতারণার জাল বুনতে পারেন, তা ভেবে বিস্মিত অনেকেই। জেসনের কাহিনি যেন এক জলজ্যান্ত সতর্কবার্তা- সত্যি যত দিনই চাপা থাকুক না কেন, এক দিন তা প্রকাশ্যে আসবেই।
