কাজ নয়, বিতর্কের কারণেই এখন চর্চার কেন্দ্রে অভিনেতা ঋজু বিশ্বাস। এক সময় ‘বউ কথা কও’, ‘তোমায় আমায় মিলে’-র মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে নায়কের চরিত্রে যিনি ঘরে ঘরে পরিচিতি পেয়েছিলেন, আজ সেই ঋজুকেই ‘অস্বাভাবিক’ আচরণের অভিযোগে কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ফেসবুকে অচেনা মহিলাদের ইনবক্সে প্রশংসাসূচক বার্তা পাঠাতেন। সম্প্রতি সেইসব চ্যাটের স্ক্রিনশট ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বেশিরভাগ জায়গায় দেখা গিয়েছে, ঋজু লিখছেন — ‘শাড়িতে তোমায় সুন্দর দেখায়।’ কোথাও আবার তিনি ফোন নম্বর চেয়েছেন, আর কেউ সাড়া না দিলে পুনরায় মেসেজ করে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছেন অভিনেতা। এখন নেটমাধ্যমে ঋজুকে নিয়ে কটাক্ষের ঝড়। একের পর এক মিম, ব্যঙ্গ, তির্যক মন্তব্যে কার্যত প্লাবিত সোশ্যাল মিডিয়া। যাবতীয় জলঘোলার মাঝেই নেটিজেনদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন ঋজুর মানসিক অবস্থা নিয়ে। তাঁর এই আচরণের নেপথ্যে মানসিক চাপ বা অস্থিরতা রয়েছে কি না, তা নিয়েই এখন আলোচনা চলছে নেটদুনিয়ায়। কেউ কেউ আবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, লাগাতার ট্রোলিং ও সমালোচনার প্রভাব অভিনেতার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ভয়ঙ্করভাবে পড়তে পারে।

মনোবিদ রিঙ্কু পাঠক মনে করছেন, ঋজুর এই আচরণকে একেবারে স্বাভাবিক বলা যায় না। তাঁর মতে, একই ধরনের বার্তা একাধিক মহিলাকে পাঠানোর অভ্যাসের পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে গভীর মানসিক অস্থিরতা বা ব্যক্তিগত সঙ্কটের ছাপ।

রিঙ্কু বলেন, “এই ধরনের পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ প্রায়ই দেখা যায় যখন কেউ আত্মবিশ্বাস হারায়, মনোযোগ বা স্বীকৃতি পাওয়ার তীব্র প্রয়োজন অনুভব করে। হয়তো সেই অচেতন চাহিদারই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওঁকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না। তবে ওঁর ব্যক্তিগত, পেশাগত বা পারিবারিক জীবনে কোনও রকম বিপর্যয় ঘটেছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। ওঁকে কাঠগড়ায় তোলার আগে ভাল করে বুঝতে হবে উনি কোনও সমস্যার সম্মুখীন কি না।”

তবে মনোবিদের মতে, ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্কট যত গভীরই হোক না কেন, তা সামলানোর এহেন উপায় কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। রিঙ্কু বলেন, “নিজের মানসিক চাপ বা একাকিত্ব মেটানোর জন্য অন্যের ব্যক্তিগত পরিসরে অনধিকার প্রবেশ করা একপ্রকার আত্মনিয়ন্ত্রণহীনতা। এমন আচরণ ক্ষণিক স্বস্তি দিলেও, দীর্ঘমেয়াদে তা নিজের সামাজিক ভাবমূর্তি ও মানসিক সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর।”

কেরিয়ারের শুরুতেই সাফল্য দেখেছেন ঋজু। একের পর এক হিট ধারাবাহিক এসেছে তাঁর ঝুলিতে। পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। তারপর দীর্ঘ বিরতি, বহু ব্যক্তিগত সঙ্কট। এখন প্রশ্ন— হারানো আলো ফেরাতেই কি এমন আচরণ? মনোবিদের উত্তর, “এই প্রশ্নের উত্তর ওঁর সঙ্গে কথা না বললে পাওয়া যাবে না। ঋজু হয়তো ভেবেছেন প্রশংসা করা অন্যায় নয়, কিন্তু অপর পক্ষের কাছে তা যৌনগন্ধী বা অস্বস্তিকর লাগতেই পারে। কেউ সাড়া না দিলে আর যোগাযোগ করা উচিত নয়। এটা ওঁকে বুঝতে হবে। আর ট্রোল করে নয়, প্রয়োজন হলে প্রতিবাদ করুন, নইলে উপেক্ষা করাই শ্রেয়।”

মনোবিদের মতে, পরিচিত বা জনপ্রিয় কেউ মেসেজ করলে অনেকেই সহজে সাড়া দেন, কিন্তু নেটমাধ্যমের এমন কথোপকথন থেকেই বড় বিপদের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। তাঁর ব্যাখ্যা, “নেটমাধ্যমে কে কাকে কী অভিসন্ধি নিয়ে মেসেজ করে, তা জানা সম্ভব নয়। সেখান থেকে কোনও বিপদ ঘটে যেতেই পারে। সুতরাং যিনি মেসেজ করে কথোপকথন তৈরি করার চেষ্টা করছেন, তাঁকে সতর্ক থাকতে হবে। আর যদি কোনও রকম সীমালঙ্ঘন হয়, তা হলে ট্রোল-কটাক্ষ সহ্য করার জন্যও তাঁকে মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ তাঁর আচরণও কিন্তু কোথাও গিয়ে অন্যের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

তবে শুধু মহিলাই নন, একাধিক পুরুষকেও নাকি ফেসবুকে মেসেজ করেছেন ঋজু। ‘বং গাই’ কিরণ দত্ত-সহ আরও অনেকে স্ক্রিনশট শেয়ার করে এমনই দাবি করেছেন। রিঙ্কুর কথায়, “এর কী কারণ হতে পারে তা একমাত্র ওঁর সঙ্গে কথা বলেই বুঝতে হবে। হতেই পারে উনি একাকিত্বে ভুগছেন। বন্ধু খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আবার অন্য কোনও কারণও থাকতে পারে। এই সময় ওঁর কাছের মানুষদের উচিত ওঁর পাশে থাকা। ওঁর সঙ্গে কথা বলা। কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, তা বোঝা। প্রয়োজনে মনোবিদের সাহায্যও নিতে পারেন।”