আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রত্নতত্ত্বের দুনিয়ায় নিখুঁত ভাবে সংরক্ষিত কোনও কিছুর সন্ধান মেলা ভার। তবে সম্প্রতি আর্জেন্টিনার গবেষকদের হাতে এল এমনই এক বিরল ‘গুপ্তধন’ যা বদলে দিতে পারে জীববিজ্ঞানের গতিপথ। একেবারে অক্ষত ডাইনোসরের ডিম!
প্যাটাগোনিয়ায় জীবাশ্মবিদরা এমন একটি ডাইনোসরের ডিমের সন্ধান পেয়েছেন, যা ক্রেটেশিয়াস যুগের বলে মনে করা হচ্ছে। সেই হিসাবে ডিমটির বয়স আনুমানিক ৭ কোটি বছর হতে পারে।
এত প্রাচীন কোনও জিনিসে সামান্য ফাটল থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ডাইনোসরের এই ডিমটি নিখুঁত অবস্থায় রয়েছে। খোলসটিও সম্পূর্ণ অক্ষত। এর ফলেই বিজ্ঞানীদের আশা ডিমটির ভিতরে ভ্রূণ থাকার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
টেক্সাসের যে বিজ্ঞানীরা ডায়ার উলফের মতো বিলুপ্ত প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, তাঁরা আগে জানিয়েছিলেন যে ডাইনোসরকে ফিরিয়ে আনার কোনও পরিকল্পনা তাঁদের নেই। তবে এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের কথা শোনার পর তাঁরাও প্রলুব্ধ হতে পারেন। গত ৭ অক্টোবর, আর্জেন্টিনার ‘মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল সায়েন্সেস’-এর একটি দল এই বিস্ময়কর আবিষ্কারটি করে। তাঁদের মতে, ডিমটি এতটাই নিখুঁত ভাবে সংরক্ষিত যে, দেখে মনে হচ্ছে সেটি যেন সদ্য পাড়া।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ডিমটি ‘বোনাপার্টেনিকাস’ গণের কোনও ডাইনোসরের। এটি এক প্রকার মাংসাশী ডাইনোসর, যা ক্রেটেশিয়াস যুগের শেষ দিকে পৃথিবীতে বাস করত।
গবেষক গঞ্জালো মুনোজ ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক’-কে বলেন, “এটা আমাদের কাছে চূড়ান্ত বিস্ময়ের। কোনও মাংসাশী ডাইনোসরের ডিম খুঁজে পাওয়াই বিরল, তার উপর এমন নিখুঁত অবস্থায় পাওয়া তো প্রায় অকল্পনীয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “ডিমটি খুঁজে পাওয়ার পর গোটা দলের আনন্দ ছিল দেখার মতো।”
মাংসাশী প্রজাতির ডিমের সন্ধান মেলা এমনিতেই বিরল। কারণ, এই ডিমগুলির খোলসওও পাতলা হয়, ফলে সহজেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই আবিষ্কারের ফলে বাস্তবেই ‘জুরাসিক পার্ক’ তৈরি হবে কি না, তা সময় বলবে। তবে ডিমের ভিতরে সত্যিই যদি ভ্রূণের সন্ধান মেলে, তা জীবাশ্মবিদ্যার ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে।
স্বাভাবিক ভাবেই, গবেষকদের পরবর্তী পদক্ষেপ হল ডিমটিকে বিভিন্ন দিক থেকে স্ক্যান করা। তাঁদের আশা, এর মাধ্যমে ভিতরে সংরক্ষিত ভ্রূণের সন্ধান মিলতে পারে। সেই ভ্রূণ পাওয়া গেলে মাংসাশী ডাইনোসরদের বিবর্তন, বিকাশ এবং ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোনোর পদ্ধতি সম্পর্কে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা সম্ভব হবে।

সৌভাগ্যের বিষয় বিজ্ঞানীরা এই আবিষ্কারের মুহূর্তটি সরাসরি সম্প্রচার (লাইভ স্ট্রিম) করছিলেন। ফলে বিশ্বজুড়ে বহু ডাইনোসর-প্রেমী এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পেরেছেন। অভিযানের-প্রধান ফেদেরিকো অ্যাগনোলিন বলেন, “বিজ্ঞানের দৌলতে আমরা এখন এমন অনেক মানুষের কাছে পৌঁছতে পারি, যাঁদের কাছে আগে পৌঁছনো সম্ভব ছিল না।”
বিজ্ঞানীরা ডিমের অন্দরের রহস্য ভেদ করার পর, সেটিকে নিয়ে আরও গবেষণার জন্য আর্জেন্টিনার ‘মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল সায়েন্সেস’-এ নিয়ে যাবেন। গবেষণা শেষে ডিমটি প্যাটাগোনিয়ায় ফিরিয়ে আনা হবে এবং সেখানকার একটি জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য রাখা হবে।
