শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে আমরা সাধারণত গাউট বা জয়েন্টের ব্যথা নিয়ে চিন্তা করি। কিন্তু জানেন কি বাড়তি ইউরিক অ্যাসিডের কারণে চোখেরও ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা দীর্ঘদিন বেশি থাকলে চোখের নানা গুরুতর রোগের আশঙ্কা তৈরি হয়।

ইউরিক অ্যাসিড কীভাবে চোখের ক্ষতি করে

ইউরিক অ্যাসিড শরীরে তৈরি হয় যখন প্রোটিন জাতীয় পদার্থ পিউরিন ভেঙে যায়। সাধারণত কিডনি ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু যখন শরীরে এর পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন রক্তে থেকে যায় অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড, যা সময়ের সঙ্গে শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে ক্ষতি করতে শুরু করে।

চোখের ক্ষেত্রেও ইউরিক অ্যাসিডের বাড়তি উপস্থিতি বিপজ্জনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি হলে চোখের টিস্যুতে প্রদাহ বা প্রদাহ শুরু হয়। এতে চোখের রক্তনালী, রেটিনা ও অপটিক নার্ভে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেখা দেয়। ফলে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হতে থাকে।

আরও পড়ুনঃ শীত পড়ার আগেই টান ধরছে ত্বকে? রোজের পাতে কোন কোন খাবার রাখলে শুষ্কতা থেকে বাঁচবে ত্বক?

কোন কোন চোখের রোগের ঝুঁকি বাড়ে

১. গ্লুকোমাঃ চোখের ভেতরের চাপ বেড়ে যাওয়ায় অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ইউরিক অ্যাসিড বেশি, তাদের গ্লুকোমার ঝুঁকি সাধারণের তুলনায় বেশি।

২. ড্রাই আই সিনড্রোমঃ বেশি ইউরিক অ্যাসিড চোখের তেলের স্তর নষ্ট করে দেয় ফলে চোখ শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং জ্বালাপোড়া বা চুলকানি হতে দেখা যায়।

৩. রেটিনার ক্ষতিঃ অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিডের কারণে চোখের রেটিনায় ইউরেট ক্রিস্টাল জমে। এতে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে বা ঝাপসা দেখা দেয়।

৪. চোখের প্রদাহ ও সংক্রমণ: দীর্ঘস্থায়ী হাইপারইউরিসেমিয়া চোখের অভ্যন্তরীণ টিস্যুতে প্রদাহ তৈরি করে যা কখনও কখনও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।

চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে, চোখে সামান্য ঝাপসা দেখা, জ্বালাপোড়া বা শুষ্কতা দেখা দিলেও তা অবহেলা করা ঠিক নয়। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা ৭ এমজি/ডিএল-এর বেশি হলে চোখের পরীক্ষা নিয়মিত করানো উচিত। কারণ অনেক সময় চোখের ক্ষতি ধীরে ধীরে হয় প্রথম দিকে বোঝা যায় না।

কীভাবে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখবেন? পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন, রেট মিট, সামুদ্রিক মাছ, অ্যালকোহল ও চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন। বেশি করে শাকসবজি ও ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খান। প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খান। 

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা শুধু জয়েন্টের নয়, চোখের জন্যও সমান বিপজ্জনক। তাই নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ও চোখের চেকআপ করা জরুরি। সময়মতো রোগ ধরা পড়লে গ্লুকোমা বা রেটিনার স্থায়ী ক্ষতি রোধ করা সম্ভব।