পেটের সমস্যা বললেই আমাদের বেশিরভাগের মনে আসে অ্যাসিডিটি, মানসিক চাপ, বা আগের রাতের অতিরিক্ত মশলাদার খাবার। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, এই সাধারণ অস্বস্তিগুলিই কখনও কখনও হতে পারে আরও গুরুতর রোগের প্রাথমিক লক্ষণ — গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার বা পেটের ক্যানসার। কথাটা যদিও ভয়ঙ্কর শোনায়, কিন্তু সময়মতো ধরা পড়লে এই রোগের চিকিৎসা অনেক সহজ ও কার্যকর হতে পারে।
অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া
যদি লক্ষ্য করেন, অল্প খাওয়ার পরেই পেট ভরে যাচ্ছে বা খাওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলছেন, তবে সতর্ক হন। পেটে টিউমার তৈরি হলে তা খাবার হজমের প্রক্রিয়া ধীর করে দিতে পারে বা পেটের ধারণক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ফলে খিদে কম পায় এবং ওজন হঠাৎ কমে যেতে পারে।
বারবার গ্যাস বা ঢেঁকুর ওঠা
কখনও কখনও গ্যাস বা ফোলাভাব স্বাভাবিক হলেও, যদি প্রায় প্রতিবার খাওয়ার পর পেটে টান বা অস্বস্তি অনুভব করেন, বা অতিরিক্ত ঢেঁকুর ওঠে, তবে তা বিপদের ইঙ্গিত হতে পারে। গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়ে পাকস্থলীর আস্তরণে পরিবর্তন হয়, যা সহজেই গ্যাস আটকে রাখতে পারে। সাধারণ তেল-মশলাযুক্ত খাবারের কারণে হওয়া অস্থায়ী ফোলাভাবের সঙ্গে এই ধরনের ফোলাভাবের পার্থক্য স্পষ্ট।
হালকা বমি বমি ভাব
মাঝে মাঝে হালকা বমি ভাব হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যদি তা বারবার ফিরে আসে, অথচ কোনও সংক্রমণ, নষ্ট খাবার বা অন্য অসুস্থতার কারণ না থাকে, তবে তা হতে পারে পাকস্থলীর দেওয়ালে প্রদাহের ইঙ্গিত। কখনও ভাল থাকলেও আবার হঠাৎ অস্বস্তি ফিরে এলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অজানা কারণে আয়রনের ঘাটতি
পাকস্থলীর ভিতরের আস্তরণ ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ শুরু করলে তা চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এর ফলস্বরূপ শরীরে আয়রন-ঘাটতি জনিত অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। আপনি অস্বাভাবিক ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, ত্বক ফ্যাকাশে হওয়া বা নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া লক্ষ্য করতে পারেন — এগুলো কিন্তু জীবনঘাতী রোগের সতর্কবার্তা হতে পারে।
হঠাৎ খাবারে অসহিষ্ণুতা
যে খাবার আগে স্বাভাবিকভাবে হজম হত, এখন যদি তা অস্বস্তি বা পেটব্যথা ঘটায়, তবে সেটিও সতর্ক হওয়ার সঙ্কেত। এই পরিবর্তন পাকস্থলীর আস্তরণে প্রদাহ বা হজম ক্ষমতা হ্রাসের কারণে হতে পারে। তাই হঠাৎ তৈরি হওয়া নতুন খাদ্য-অসহিষ্ণুতা বা মশলাযুক্ত খাবারে অস্বস্তি হলে তা অবহেলা করবেন না।
নিজের শরীরের সঙ্কেতগুলোর দিকে মনোযোগ দিন। অল্প অস্বস্তি বলে উপেক্ষা করলে তা বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
