প্রতি বছর ১২ অক্টোবর তারিখে বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস পালন করা হয়।
এই দিনের উদ্দেশ্য হলো আর্থ্রাইটিস ও মাসকিউলোস্কেলেটাল (হাড় ও পেশী সংক্রান্ত) রোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

হাড় মজবুত রাখা আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলির মধ্যে থাকা উচিত। কারণ শরীরের পুরো কাঠামোই হাড়ের উপর নির্ভরশীল। হাড় আমাদের দেহকে গঠন দেয়, পেশি ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ভর দেয়। এগুলি যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে মানুষের পক্ষে শুধু হাঁটাচলাই নয়, ওঠাবসাও কঠিন হয়ে যায়। সাধারণভাবে যখন জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা হয়, তখন তাকে আর্থ্রাইটিস বলা হয়।

আর্থ্রাইটিসের কারণ ও ঝুঁকি

আর্থ্রাইটিস হওয়ার অনেক কারণ আছে, যার বেশিরভাগই আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত। তাহলে প্রশ্ন হল— আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কেন বাড়ে? এর লক্ষণ কী কী? কোন বয়সে এটি বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে? আর হাড়কে কীভাবে সুস্থ রাখা যায়?  দিল্লির এলএনজেপি হাসপাতালের পেইন কনসালটেন্ট ডা. ভুবনা আহুজা বিস্তারিত জানাচ্ছেন।
 

চিকিৎসকের মতে, হাড় সম্পর্কিত কিছু সাধারণ রোগও রয়েছে।

অস্টিওপোরোসিস: এতে হাড় দুর্বল ও ফাঁপা হয়ে যায়।

আর্থ্রাইটিস: জয়েন্টে ব্যথা ও ফোলাভাব হয়।

ফ্র্যাকচার: আঘাত লাগলে হাড় ভেঙে যায়।

ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি: হাড় নরম হয়ে ব্যথা হয়।

এছাড়া আর্থ্রাইটিসে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে জয়েন্টে ব্যথা এবং প্রদাহ হয়।
কী ঘটে আর্থ্রাইটিসে

ডা. আহুজার মতে, আর্থ্রাইটিস মূলত জয়েন্টের প্রদাহ, যেখানে ব্যথা, শক্ত হয়ে যাওয়া এবং লালচে ভাব দেখা যায়। এটি যে কোনও বয়সে হতে পারে, তবে ৪০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ ও মহিলারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন।

আর্থ্রাইটিসের বিভিন্ন ধরন আছে। যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, গাউট। প্রতিটি ধরনের উপসর্গ আলাদা।

শুরুর দিকে সাধারণত ব্যায়াম বা পরিশ্রমের পর ব্যথা হয়, কিন্তু পরে কোনও কারণ ছাড়াই ব্যথা হতে থাকে। সময় বাড়ার সঙ্গে ব্যথা অন্তরালে বা স্থায়ীভাবে থাকতে পারে, জয়েন্ট ফুলে যায়, শক্ত হয়ে পড়ে। কখনও কখনও জয়েন্টের হাড় একে অপরের সঙ্গে ঘষা খেলে ‘কচর-কচর’ শব্দ শোনা যায়।

কারা বেশি ঝুঁকিতে

বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্থ্রাইটিস শুধু বৃদ্ধদের রোগ নয়। এটি যুবক-যুবতী ও এমনকি শিশুদের মধ্যেও দেখা যেতে পারে। সময়মতো যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি চলাফেরার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং দৈনন্দিন কাজকর্মকে কঠিন করে তোলে। অবিরাম ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে মানসিক চাপ এবং ক্লান্তিও বেড়ে যেতে পারে।

আর্থ্রাইটিসের প্রধান কারণ

ডা. ভুবনা আহুজার মতে, রোদে না থাকা, অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়া, এবং হাঁটুর ব্যথা উপেক্ষা করা— এগুলো আর্থ্রাইটিসের বড় কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
তাই এই ধরনের খাদ্যাভ্যাস থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা উচিত। তার সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম, হালকা যোগব্যায়াম বা স্ট্রেচিং করা প্রয়োজন— এতে জয়েন্টে নমনীয়তা এবং চলাচলের ক্ষমতা বজায় থাকে।

আর্থ্রাইটিস থেকে বাঁচার উপায়

আর্থ্রাইটিস এড়ানোর প্রথম শর্ত হল ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, কারণ স্থূলতা হাঁটু এবং পায়ের জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া, আর্থ্রাইটিস থেকে বাঁচতে আপনার খাদ্যতালিকায় থাকা উচিত। যেমন সবুজ পাতা-ওয়ালা সবজি, ফলমূল, এবং ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার। এই সব উপাদান জয়েন্টের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং হাড়কে সুস্থ রাখে।