সে এক সময় ছিল। সিনেমা আর সাদামাটা জীবন মিলেমিশে যেত সেলুলয়েডে। চাকচিক্য মোড়া চোখ আয়োজন নয়, পর্দা জুড়ে ছড়িয়ে থাকত মাটির সঙ্গে লেগে থাকা মানুষের গল্প। অতি সাধারণ গৃহবধূর রোজনামচায় জড়িয়ে থাকা আবেগ হোক বা গ্রাম্য মেয়ের সরল প্রেমের আখ্যান, পর্দায় এক সময় তথাকথিত জৌলুসহীন ছবিই বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে। ভেঙেছে একের পর এক রেকর্ড। নয়ের দশকের সেই সহজ সময়ে আজকের মতো ছিল না প্রচারের ঘনঘটা। ‘কোল্যাব’-এর বাহার।
অভিনেত্রী চুমকি চৌধুরীর উত্থান ঠিক তখন। ‘হীরক জয়ন্তী’, ‘মেজো বউ’, ‘ইন্দ্রজিৎ’, ‘গীত সঙ্গীত’এর মতো ছবি যে নায়িকার ঝুলিতে, তিনি এখন আলোকবৃত্ত থেকে অনেকটাই দূরে। তবু বদলে যাওয়া ইন্ডাস্ট্রির ছবি প্রচারের তাগিদ তাঁর চোখ এড়ায় না। তিনি যদিও মনে করেন, বর্তমান সময়ে ওটিটি-র কারণে দর্শকের কাছে বিকল্পও বেশি। তাই ছবিমুক্তির দিকে চেয়ে বসে থাকার অবকাশ নেই আর। ‘মেজো বউ’-এর কথায়, “এখন বিনোদনের অনেক মাধ্যম তৈরি হয়েছে। ফলে প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। আমি বলব সেই সময় আমার ছবি এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে শুধুমাত্র আমার বাবা অঞ্জন চৌধুরীর জন্য। তখন কোনও প্রচার ছাড়াই দলে দলে লোক প্রেক্ষাগৃহে ছুটে যেত। একটা ভাল পারিবারিক গল্প দেখবে বলে।”
চলতি বছরে পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে বেশ কয়েকটি বড় ক্যানভাসের ছবি। তালিকায় রয়েছে ‘রঘু ডাকাত’, ‘দেবী চৌধুরানী’, ‘রক্তবীজ ২’। ইতিমধ্যেই মুক্তি পাওয়া ট্রেলার এবং একাধিক গান থেকে ছবিগুলির বাজেট স্পষ্ট। অর্থাৎ উৎসবের মরশুমে লাভের কড়ি সংগ্রহের ঈপ্সাও আকাশছোঁয়া। জেলা থেকে জেলায় ছুটে যাচ্ছেন কলাকুশলীরা। রোদে পুড়ে, ঘামে ভিজে চলছে শেম মুহূর্তের ‘প্রোমোশান’। অথচ এক সময় কোনও রকম প্রচার ছাড়াই রেকর্ড ভাঙত একের পর এক বাণিজ্যিক ছবি। বাজেটও ছিল নামমাত্র। সময়ের সঙ্গে কেন পাল্টে গেল সেই চিত্র? কেনই বা মরিয়া হয়ে বলতে হয় বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ানোর কথা? আজকাল ডট ইনের তরফে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল চুমকির কাছে। তাঁর উত্তর, ‘আসলে সব বদলে গিয়েছে। সময়ের সঙ্গে ট্রেন্ড বদলেছে। সোশ্যাল মিডিয়া আসায় তা আরও দ্রুত হয়েছে। আমার বাবা বা তাঁর সমসামিয়কদের তৈরি ছবির প্রচার হত মানুষের মুখের কথায়। তখন প্রচার ছাড়াই প্রেক্ষাগৃহের বাইরে হাউজফুল বোর্ড পড়ত। কিন্তু এখন আর সেই সময় নেই। তাই হয়তো সাফল্য পেতে আরও বেশি পরিশ্রম করে ছবির প্রচার করতে হয়।’
চুমকির বাবা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরীর ‘বউ’ সিরিজ হোক বা ‘আব্বাজান’, ‘মুখ্যমন্ত্রী’, সাধারণ মানুষকে নিয়ে তৈরি একের পর এক ছবি এনেছে প্রশ্নাতীত সাফল্য। চুমকি মনে করেন, আজও কেউ দায়িত্ব নিয়ে এমন গল্প পর্দায় তুলে ধরলে, সাধারণ মানুষ তা দেখবেন। চুমকি বললেন, “আমার বাবা যদি আজ বেঁচে থাকতেন এবং ছবি বানাতেন, আমার মনে হয় কিছুটা হলেও হাল ফিরত। কারণ আজও ‘প্রজাপতি’র মতো পারিবারিক ভাল ছবি মানুষ দেখছেন। আমি নিজে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটি দেখেছি। ভাল ছবি এথনও দর্শক দেখেন। ভাল গল্প এবং নির্মাণ হলে, তা নিশ্চয়ই সাফল্য দেখবে।”
