কৃশানু মজুমদার: তিনি ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাসে প্রথম জাপানি ফুটবলার। তাঁর দেখানো পথ ধরেই লেসলি ক্লডিয়াস সরণির ক্লাবে একে একে খেলে গিয়েছেন রুইজি সুয়েকা, উসা কাটসুমি। এবার আসছেন হিরোশি ইবোসুকি

আরাতা ইজুমি লাল-হলুদের নব্য জাপানি ফুটবলারকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। একবুক শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তাঁকে। তিনি বলছেন, ''হিরোশিকে বলব ইস্টবেঙ্গল-অধ্যায় পুরোদস্তুর উপভোগ করো''

পরক্ষণেই তিনি ফিরে যাচ্ছেন নিজের ফুটবলজীবনে। জিজ্ঞাসা করছেন একসময়ের সতীর্থ সৌমিক দে-র কথা। এই প্রতিবেদককে বলছেন, ''সৌমিক এখন কেমন আছে? নিশ্চয় ভাল আছে। আমার হয়ে ওকে হাই বলে দেবেন।'' আই লিগে ইন্টার কাশীর সহকারী কোচ ছিলেন আরাতা। ভারতের নাগরিকত্ব গ্রহণ করার পর তাঁর নাম 'নীলকণ্ঠ'। এদেশের ফুটবলভক্তরা তাঁকে আরাতা নামেই মনে রেখেছেন। 

আরও পড়ুন:  এশিয়া কাপে নেমেই পরপর সাফল্য, গম্ভীরের সঙ্গে বিশেষ কথোপকথনের রহস্য ফাঁস করলেন কুলদীপ যাদব...

লাল-হলুদের প্রথম জাপানি ফুটবলার নস্ট্যালজিক। বলছেন, ''আমি ২০০৬ সালে ইস্টবেঙ্গলে এসেছিলাম। তখন জাতীয় ফুটবল লিগ ছিল। এনএফএল তখনও পেশাদার হয়নিসেমি-প্রফেশনাল ছিল। এখন আইএসএলের যুগ। পরিকাঠামো অনেক উন্নত। অনেক সুযোগ সুবিধা। আইএসএলে খেলে ইস্টবেঙ্গল। তারা হিরোশিকে সর্বরকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবে হিরোশিকে বলব, দারুণ একটা সুযোগ তুমি পেয়েছ। গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে ইস্টবেঙ্গলের ভক্তরা। খুব জনপ্রিয় ক্লাব। নিজের সেরাটা উজাড় করে দিও। আমি নিশ্চিত হিরোশি দমদম বিমানবন্দরে যেদিন পা রাখবে, সেদিন থেকেই ওর উপরে মিডিয়ার সার্চলাইট পড়বে। ওকে নিয়ে লেখালেখি শুরু হয়ে যাবে। ইস্টবেঙ্গল ভক্তদের নজর থাকবে হিরোশির উপরে। সমর্থকরা ওর কাছ থেকে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আশা করবে। আমার বিশ্বাস হিরোশিও সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করবে''

No photo description available.

ইস্টবেঙ্গলে আরাতার 'হেডস্যর' ছিলেন ব্রাজিলীয় কোচ কার্লোস পেরেরা। তিনি এখনও ভোলেননি 'জাপানি বম্বার'কেকার্লোস বলছেন, ''আরাতা দক্ষ ফুটবলার ছিল। ডান পা-টা খুবই শক্তিশালী। শুটিংয়ে পারদর্শী। হারতে জানত না। সব সময়ে লড়ে যেত। প্র্যাকটিসের সময়ে সতীর্থদের অনুপ্রেরণা জোগাতফুটবলার হিসেবে যেমন ভাল, মানুষ হিসেবে এককথায় দুর্দান্ত।'' 

আরাতা ফিরে যাচ্ছেন তাঁর প্রথম ডার্বির দিনে। তিনি বলে চলেন, ''প্রথম ডার্বির অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। আমি শুনেছিলাম ১ লক্ষ ২০ হাজার লোক উপস্থিত হবে। তবে ম্যাচের দিন ৮০-৯০ হাজার দর্শক এসেছিলেন। জীবনের প্রথম ডার্বি জিতেছিলামঅ্যালভিটোর বাড়ানো বল বুকে রিসিভ করে সৌমিকের উদ্দেশে সেন্টার ভাসিয়েছিলাম। সৌমিক হেডে গোলটা করেছিল। এখনও মনে আছে সেই ডার্বির স্মৃতি। খেলার শেষে আরেক কাণ্ড। আমি ড্রেসিং রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরোতেই দেখি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা আমাকে ঘিরে ধরেছেন। আমি ওই দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম'' 

No photo description available.

আরাতা মনে করেন হিরোশিও তাঁর মতোই ডার্বিতে জয়ী হবেন। নব্য লাল-হলুদ স্ট্রাইকারকে পরামর্শ দিয়ে বলছেন, ''কলকাতার সমর্থকরা ফুটবলকে কদর করে। ডার্বিতে একটা গোল করলেই তুমি সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে উঠবে। আমার স্থির বিশ্বাস তুমি সফল হবে। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাবে হিরোশি''

ইস্টবেঙ্গলে এক মরশুমই ছিলেন আরাতা। তার পরে দেশের একাধিক ক্লাবের জার্সি পরে খেলেছেন। আইএসএলে এটিকের জার্সিতেও তিনি নজরকাড়া ফুটবল খেলেছেন। আরাতা বলছেন, ''আমার জোড়া গোলেই এটিকে ৩-২ গোলে হারিয়েছিল কেরালা ব্লাস্টার্সকে। আমি পরিবর্ত হিসেবে নেমে দুটো গোল করেছিলাম'' পুরনো স্মৃতি উসকে দেন 'নীলকণ্ঠ'। 

অনুজ হিরোশি সম্পর্কে আরাতা বলছেন, ''স্পেনের একাধিক ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে হিরোশির। অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছে। অভিজ্ঞ প্লেয়ার জাপানের অনূর্ধ্ব ১৯, অনূর্ধ্ব ২২ দলেও খেলেছে। ওর অভিজ্ঞতা ইস্টবেঙ্গলের কাজে লাগবে'' নিজের ফুটবলজীবনে ফিরে গিয়ে আরাতা বলছেন, ''ভারতের জার্সিতে যেদিন প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলাম, সেই অনুভূতি কীভাবে প্রকাশ করব জানি না। ভারতের হয়ে অভিষেক ম্যাচ আমার জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত''

No photo description available.

ফুটবলার আরাতা এখন কোচ। ভূমিকা বদলে গিয়েছে। আরাতা শোনাচ্ছেন নিজের স্থির লক্ষ্যের কথা, ''উত্তর প্রদেশের লোকসংখ্যা বেশি। প্রতিভাও লুকিয়ে রয়েছে। সেই প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলারদের খুঁজে বের করতে হবে। সঠিক ভাবে কাজ করলে ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের ফুটবলেরও উন্নতি হবে।''

আরাতার প্রতিটি কথায় ফুটে উঠছে অভিজ্ঞতা। এই দেশের ফুটবল সম্পর্কে তাঁর ধারণা স্পষ্ট। ইস্টবেঙ্গলের নতুন জাপানি স্ট্রাইকারকে সাহস জুগিয়ে আরাতা বলছেন, ''প্রথম দিন থেকেই আমি তোমার খেলা দেখব। অনেক শুভেচ্ছা রইল।'' লাইট,ক্যামেরা, অ্যাকশন--ইস্টবেঙ্গলে হিরোশি-শো শুরু হল বলে। 

আরও পড়ুন: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফিরলেন মোরিনহো, দু’দশকেরও বেশি সময় পর বেনফিকায় ফিরলেন ‘স্পেশাল ওয়ান’...