আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভিন্ন মঞ্চ। আলাদা পরিবেশ। হকি থেকে সরাসরি ফুটবল। ইস্টবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠা দিবসে 'ভারত গৌরব' সম্মানে সম্মানিত করা হল ভারতীয় হকি দলের প্রাক্তন অধিনায়ক পদ্মভূষণ পিআরশ্রীজেশকে। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ছিলেন ক্লাবের সভাপতি মুরারি লাল লোহিয়া এবং দুই প্রাক্তন ফুটবলার ভাস্কর গাঙ্গুলি ও অতনু ভট্টাচার্য। খাওয়ানো হয় রসগোল্লা। ইস্টবেঙ্গলের এই সম্মান পেয়ে অভিভূত হকি তারকা।
শ্রীজেশ বলেন, 'একজন হকি প্লেয়ারকে সংবর্ধনা দিচ্ছে ফুটবল ক্লাব। এটা একটা বিশেষ এবং অভিনব ঘটনা। আমার মনে হয় তৃতীয় হকি প্লেয়ার হিসেবে আমি এই সম্মান পাচ্ছি। সুতরাং, দারুণ ব্যাপার।' এশিয়া কাপ ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। হকিতে কি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে চায় ভারতীয় দল? বিষয়টি সরকারের কোর্টে ঠেলে দেন শ্রীজেশ। বলেন, 'আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। এটা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। আমি প্লেয়ার নয়, আমি কোচ। তাই এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।'
শুক্রবার সন্ধেয় জাঁকজমকভাবে পালিত হয় ইস্টবেঙ্গলের ১০৬তম প্রতিষ্ঠা দিবস। ড. রমেশ চন্দ্র সেন মেমোরিয়াল জীবনকৃতি সম্মানে সম্মানিত করা হয় প্রাক্তন অধিনায়ক সত্যজিৎ মিত্রকে। তবে এদিন পুরস্কার নিতে হাজির ছিলেন না তিনি। ব্যোমকেশ বোস মেমোরিয়াল 'জীবনকৃতি' পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় প্রাক্তন অধিনায়ক মিহির বসুকে। তিনি জানান, 'ইস্টবেঙ্গলে না খেলা পর্যন্ত একজন ফুটবলারের জীবন পরিপূর্ণতা পায় না।' পিকে ব্যানার্জি মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড পান সঞ্জয় সেন। তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিধায়ক দেবাশিস কুমার এবং মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য।

ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে কোনও যোগ নেই। কোনওদিন কোচিং করেননি। তাঁর যাবতীয় সাফল্য মোহনবাগানে। তবে সুযোগ পেলে লাল হলুদের এই সম্মানের স্বীকৃতি দেওয়ার অঙ্গীকার নিলেন। সঞ্জয় সেন বলেন, 'আমার কোনও ভাষা নেই। যেখানে আমার কোনও অবদান নেই তাঁরা এই সম্মান দিল। আমি যোগ্য কিনা জানি না। ইস্টবেঙ্গলে যে শূন্যতা যাচ্ছে সাময়িক। আগামী দিনের জন্য অপেক্ষা করুন। যদি কখনও ভবিষ্যতে সুযোগ আসে, সুদে আসরে পুষিয়ে দেওয়ায় চেষ্টা করব। পিকে ব্যানার্জি ১৯৯৭ সালে আমাকে রেলওয়ে ফুটবল ক্লাবের কোচেজ কমিটিতে নেয়। ২০০৬ পর্যন্ত রেলওয়ে এফসির কোচ ছিলাম। নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছি। এখনও পর্যন্ত শিখছি। এই সম্মান অনুপ্রাণিত করবে।'
কোনও ক্লাবের নাম না করেই কটাক্ষ ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের। জানালেন, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব বাকিদের থেকে আলাদা, তাঁরা প্রাক্তনদের সম্মান দিতে জানে। একইসঙ্গে, আগামী মরশুমে লাল হলুদের সাফল্যের বিষয়ে আশাবাদী। অরূপ বিশ্বাস বলেন, 'ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সকালে সূর্য উঠছে। ডার্বিতে সেটা প্রমাণ হয়েছে। চিৎকার করতে হবে আগের মতো। কোথায় সেই আগের দর্শক? চিৎকার করতে হবে, নয়তো প্লেয়াররা পারবে না। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব অতীতকে কখনও ভোলে না। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব সম্মান দিতে জানে। প্লেয়ারদের স্বীকৃতি দেয়। ইস্টবেঙ্গলের ফ্যান, সমর্থক সারা পৃথিবীতে। বাঙালদের একটা কথা আছে, আশায় বাঁচে চাষা। এবার সেটার জন্য প্রস্তুত থাকুন। অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনার দিন এসেছে।'
আগামী বছর সেরা সমর্থকের পুরস্কার দেওয়া হবে মনোময় ভট্টাচার্যকে। এদিন তাঁর গান দিয়েই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অজয় বোস মেমোরিয়াল 'সাংবাদিক' সম্মানে সম্মানিত করা হয় ড. পল্লব বসুমল্লিককে। পুষ্পেন সরকার মেমোরিয়াল 'আলোকচিত্রী' সম্মানে সম্মানিত করা হয় উৎপল সরকারকে। পঙ্কজ গুপ্ত মেমোরিয়াল 'রেফারি' সম্মান দেওয়া হয় করুণা চক্রবর্তীকে। প্রতুল চক্রবর্তী মেমোরিয়াল 'রেফারি' সম্মান পান কার্তিক ইন্দু। গোপাল বোস মেমোরিয়াল 'বছরের সেরা ক্রিকেটার' সম্মানে সম্মানিত করা হয় কনিষ্ক শেঠকে। স্বপন বল মেমোরিয়াল 'সমর্থক’ সম্মান পান ননী গোপাল বণিক এবং মন্টু সাহা। ‘প্রাইড অফ বেঙ্গল’ সম্মানে সম্মানিত করা হয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাব এবং ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের ফুটবলার সঙ্গীতা বাঁশফোড়কে। আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টার শ্রী আরণ্যক ঘোষকে প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ বিশেষ সম্মান জানানো হয়। ১৯৭৫ সালে মোহনবাগানকে পাঁচ গোলে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই দলের পঞ্চপাণ্ডব শ্যাম থাপা, গৌতম সরকার, সমরেশ চৌধুরী, তরুণ বসু এবং রঞ্জিত মুখার্জিকে বিশেষ সম্মান জানানো হয়। কাজল ঢালির আসার কথা থাকলেও আসেননি। মোহনবাগান এবং মহমেডানের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কুণাল ঘোষ, ইশতিয়াক আহমেদ এবং দীপেন্দু বিশ্বাস।
