আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভাইয়ের পরিবর্ত হিসেবে নেমে কেউ পুরস্কার জিতেছিলেন। আবার বোনের জন্য আত্মত্যাগের নজির রয়েছে দাদার। 

কারও বাবা আবার তাঁর মেয়েকে ছেলেদের মতো মানুষ করেছিলেন। কেউ আবার শুরুতে বলই মাঠের বাইরে পাঠাতে পারতেন না। সেই সব ভারতলক্ষ্মীরা রবি-সন্ধ্যায় জ্বলে উঠলেন। 

মহিলাদের বিশ্বকাপ ফাইনালে এই লড়াকু মেয়েরাই ভারতকে পৌঁছে দিলেন তিনশোর দোরগোড়ায়। কখনও রান তোলার গতি কমে গেল। প্রবল লড়াই করে আর ব্যাটে রানের ফুলঝুরি ছুটিয়ে ৫০ ওভারের শেষে ভারত থামল সাত উইকেটে ২৯৮ রানে। জিততে হলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তুলতে হবে ২৯৯ রান। 

প্রতিটি মুখের পিছনেই রয়েছে কিছু না কিছু গল্প। ভারতের মহিলা দলের প্রতিটি ক্রিকেটারের জীবনেই রয়েছে মন কেমনের অনেক গল্প। সেই গল্প প্রেরণা জোগায়। সেই গল্প চোখে জল আনে। 

ছেলেদের ক্রিকেটে নেমে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন শেফালি ভার্মা। সেই প্রতিযোগিতায় খেলার কথা ছিল তাঁর ভাইয়ের। কিন্ অদৃষ্টের এমনই পরিহাস যে ভাইয়ের আর নামা হয়নি। অসুস্থ ভাইয়ের জার্সি পরে খেলতে নেমে পড়েন শেফালি। ছোট ছোট করে ছাঁটা চুল। মেয়ে বলে কেউ সেদিন বুঝতেই পারেনি শেফালিকে। ছোট্ট শেফালি চুটিয়ে ব্যাট করে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন। এহেন শেফালির ব্যাট আজ নবি মুম্বইয়ে ঝড় তুলল। ৭৮ বলে ৮৭ রান করলেন তিনি। সাতটি চার ও ২টি ওভার বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল তাঁর ইনিংস। শেফালি ও স্মৃতি মান্ধানা শুরুতে ১০৪ রান জোড়েন ভারতের ইনিংসে। মান্ধানা পঞ্চাশের আগেই থেমে যান। শেফালি কিন্তু চলতেই থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের বিরুদ্ কথা বলে শেফালির ব্যাট।  

টস হেরে ভারত প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে। বৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট সময়ে খেলা শুরু হয়নি। মাঠ ভর্তি দর্শকের পিঠে নীল রংয়ের জার্সি। তাঁদের সামনে নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার ক্ষণ হরমনপ্রীত-শেফালিদের সামনে।  

শেফালি-মান্ধানা শুরুটা মন্দ করেননি। কিন্তু তাঁরা ফিরে যাওয়ার পরে ভারতের রান তোলার গতি কমে যায়। সেমিফাইনালের নায়িকা জেমিমা এদিন ২৪-এ থেমে যান। আজকের দিন তাঁর জন্য ছিল না। সব দিন তো সবার সমান যায় না। আউট হওয়ার পরে বিশ্বাসই হচ্ছিল না জেমিমার।  

মোগার মেয়ে হরমনপ্রীতকে দেখে চমকে গিয়েছিলেন তাঁর কোচও। এত জোরে শট মারতে পারে মেয়েটা। হরমনের বাবা বলতেন, ''মেয়েকে ছেলেদের মতো মানুষ করেছি।'' এদিন অধিনায়ক মাত্র  ২০ করলেন। অধিনায়োকচিত ইনিংস খেলা হল না তাঁর। উলটে রান তোলার গতি কমে যায় ভারতের। আমোনজ্যোৎও ১২ করে ডাগ আউটে ফেরেন। 

তবুও হতোদ্যম হননি দীপ্তি শর্মা ও বাংলার মেয়ে রিচা ঘোষ।ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন দীপ্তি। দাদা সুমিত শর্মাই ছিলেন তাঁর অনুপ্রেরণা। উত্তরপ্রদেশের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে খেলেছেন সুমিত। দাদার সঙ্গে অনুশীলনে যেতেন বোনও। 

একদিন অনুশীলনের সময় দীপ্তির কাছে চলে আসে বল। দূর থেকে তাঁর দাদার হাতে বলটি ছুড়ে দেন দীপ্তি। মাত্র ১২ বছর বয়সের বোনের হাতের জোর দেখে বিস্মিত হন দাদা। 

সেই দীপ্তি এদিনও কব্জির জোর দেখিয়ে ৫৮ রান করলেন। আর বাংলার রিচা ঘোষ মনে করিয়ে দিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনির কথা। ফাইনালে মেয়ের খেলা দেখতে তাঁর মা-বাবা নবি মুম্বইয়ে। 

দেশের ক্রিকেটে উল্কার মতো উত্থান রিচার। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে উইকেটকিপার বাবার হাত ধরে মাঠে যেতেন রিচা। ধৈর্য ধরে বসে খেলা দেখতেন। সুযোগ পেলেও এক শটে মাঠের বাইরে বল পাঠাতেই পারতেন না। সেই রিচা এখন পরিণত। তাঁর পাওয়ারহিটিং দেখে মুগ্ধ নবি মুম্বইয়ের দর্শকরা। রিচা ও দীপ্তির জন্যই ভারত ২৯৮ রান করল শেষমেশ। রিচা চটজলদি ৩৪ করে ফেরেন। ভারত থামে তিনশোর দোরগোড়ায়।