আজকাল ওয়েবডেস্ক: সমাজমাধ্যমে বিখ্যাত হওয়ার জন্য রেল লাইনের উপর দাঁড়িয়ে বিভিন্ন রকমের ভিডিও এবং 'রিলস' বানাতে গিয়ে সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সুতি থানা এলাকার এক যুবকের প্রাণ গিয়েছে। তবে তারপরও শিক্ষা হয়নি অনেকের।
সমাজমাধ্যমে বিখ্যাত হওয়া যায় এমন ভিডিও বানিয়ে দেওয়ার নাম করে একসঙ্গে পাঁচজন নাবালিকাকে 'অপহরণ' করে পাচার করে দেওয়ার চেষ্টা এবং তাদের শ্লীলতাহানির অভিযোগে চার যুবককে গ্রেপ্তার করল ফরাক্কা থানার পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচ নাবালিকাকে। এরা সকলেই নামী স্কুলের ছাত্রী বলে জানা গিয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, উদ্ধারের পর এরা সকলেই ঝরঝরে ইংরেজিতে কথা বলছিল। ধৃত যুবকদের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করে শনিবার তাদের জঙ্গিপুর আদালতে পেশ করা হয়।
জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার অমিত কুমার সাউ বলেন, 'উদ্ধার হওয়া নাবালিকারা সমাজমাধ্যমে বিখ্যাত হওয়ার জন্য ভিডিও তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিল। এরপর তারা অসাধু কিছু ব্যক্তির খপ্পরে পড়ে যায়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ পাঁচ নাবালিকাকে উদ্ধার করেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে চার যুবককে। নাবালিকাদের সরকারি হোমে পাঠানো হয়েছে এবং ধৃত যুবকদের শনিবার আদালতে পেশ করা হয়েছে।'
পুলিশ সুপার জানান, 'কী উদ্দেশ্যে এবং কোথায় এই নাবালিকাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল পুলিশ তা তদন্ত করে দেখছে।' পুলিশ সূত্রের খবর ধৃত যুবকদের বিরুদ্ধে পকসো আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ,গত ২৪ তারিখ ফরাক্কা থানার অন্তর্গত রামনগর গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ নাবালিকা একসঙ্গে নিখোঁজ হয়ে যায়। সারাদিন খোঁজাখুঁজির পরও কোথাও তাদের সন্ধান মেলেনি। এরপরই ওই নাবালিকাদের অভিভাবকরা ফরাক্কা থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই নাবালিকারা নিজেদের সমাজমাধ্যমের পাতায় পোস্ট করার জন্য ভাল গুণমানের ভিডিও তৈরি করতে একজন দক্ষ ফটোগ্রাফারকে 'ভাড়া' করেছিল। কিন্তু সময়মতো সেই ফটোগ্রাফার আসেনি। অথচ ওই নাবালিকারা বাড়ি থেকে কিছু না বলে বেরিয়ে চলে আসায় 'লজ্জায়' তারা বাড়িতে ফিরতে পারছিল না।
সূত্রের খবর, ওই নাবালিকাদের উদ্দেশ্যবিহীনভাবে ঘুরতে দেখে সামশেরগঞ্জ থানা এলাকার বাসিন্দা জনৈক হবিবুর রহমান, রাজিবুল শেখ, সোলেমান শেখ এবং জাফর শরীফ নামে চার যুবক নিজেদের গাড়িতে তুলে নেয়।
অভিযোগ উঠেছে, এরপর ওই নাবালিকাদের ভিডিও শুট করার নাম করে তাদের গাড়িতে বসিয়ে রেখে একপ্রকার জোর করে রাতের অন্ধকারে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাতে থাকে ওই চার যুবক। ধৃত ওই চার যুবক, ওই পাঁচ নাবালিকার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তা 'সুইচড অফ' করে দেয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
যদিও পরবর্তীকালে এক নাবালিকার ফোন 'সুইচড অন' হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ওই নাবালিকাদের 'লোকেশন ট্র্যাক' করতে শুরু করে। গতকাল তাদের সামশেরগঞ্জ সংলগ্ন এলাকায় জাতীয় সড়কের উপর একটি জায়গা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে।
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, 'প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি ধৃত চার যুবক ওই নাবালিকাদের অন্য কোনও রাজ্যে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এছাড়াও গাড়ির মধ্যে তারা নাবালিকাদের যৌন হেনস্থা করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।'
