আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাঁকুড়া জেলার বাঁকুড়া দুই নম্বর ব্লকের অন্তর্গত বদড়া গ্রামে আজও ভাইফোঁটা উৎসবের আমেজ নেই। 'ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা'— এই প্রবাদবাক্য যখন গোটা রাজ্যে প্রতিধ্বনিত হয়, তখন বদড়া গ্রামের রায়পাড়ায় নেমে আসে নীরবতা। কারণ, এখানে বহু প্রাচীন এক ঘটনাকে ঘিরে এখনও পালন করা হয় না ভাইফোঁটা।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দাদের কথায়, প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বছর আগে যখন গোটা এলাকা জঙ্গলে আচ্ছন্ন ছিল, তখন ভাইফোঁটার দিনেই ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি জঙ্গলে যান কোনও প্রয়োজনে। দুর্ভাগ্যবশত, সেদিনই তিনি হিংস্র বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারান। সেই ঘটনার পর থেকেই রায়পাড়ায় বন্ধ হয়ে যায় ভাইফোঁটা পালনের রীতি। আজও গ্রামের প্রায় ৬৫টি পরিবারের বড় অংশে এই উৎসব পালন করা হয় না। শুধু ভাইফোঁটা নয়, বদড়া গ্রামকে ঘিরে রয়েছে আরও নানা বিশ্বাস ও কিংবদন্তি। এখানে কোনও দেবদেবীর মূর্তি পুজো করা হয় না। গ্রামের মহামায়া ঠাকুরানির থানই হল তাঁদের একমাত্র আশ্রয় ও ভক্তির কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: ভাইফোঁটার আকাশে কালো মেঘ, ভাই-বোনের অটুট বন্ধনে বাদ সাধলো 'মিষ্টি': ছানার জ্বরে রেকর্ড গড়ল দাম!
গ্রামবাসীরা জানান, একসময় আবার ভাইফোঁটা পালনের প্রথা শুরু হলেও জমি সংক্রান্ত বিবাদের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। মামলা-মোকদ্দমা, অশান্তি, এবং সামাজিক বিভাজনের ফলে আবারও থেমে যায় এই উৎসব। বহু বছর ধরে রায়পাড়ার ছেলেরা বোনেদের হাতে ফোঁটা না পেয়েই দিন কাটিয়েছেন। তবে সময়ের সঙ্গে বদল এসেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদড়া গ্রামেও নতুন প্রজন্মের কিছু পরিবার পুরনো বিশ্বাসের বেড়াজাল ভেঙে ভাইফোঁটা পালন শুরু করেছে। গত কয়েক বছর ধরে রায়পাড়ার একাংশে দেখা যাচ্ছে সেই পুরনো উৎসবের আভা। বাঁকুড়ার পল্লী সমাজের অলিগলিতে ছড়িয়ে থাকা এইসব প্রথা, বিশ্বাস আর কিংবদন্তিই আজও ধরে রেখেছে জেলার নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে। বদড়া গ্রামের ভাইফোঁটা না-পালনের এই ইতিহাস যেন স্মরণ করিয়ে দেয়— প্রতিটি রীতির পেছনে লুকিয়ে থাকে এক গভীর সামাজিক গল্প।
