বলিউডে ববি দেওলের নায়ক হিসেবে অভিষেক হয়েছিল ১৯৯৫ সালের বারসাত ছবিতে। কিন্তু সম্প্রতি  ‘মিঃ ইন্ডিয়া’ ছবিখ্যাত পরিচালক শেখর কাপুর জানালেন, তিনি ছবিটি ছেড়ে বেরিয়ে যাননি, বরং তাঁকে আচমকা সেই ছবির পরিচালকের আসন থেকে হঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল!

 

এক  সাক্ষাৎকারে শেখর বলেন, “আমি নিজে থেকে বারসাত ছবি ছেড়ে বেরিয়ে আসিনি। আমাকে ছবিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। আচমকা ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল! বারসাত নিয়ে তখনও জোরদার চিন্তাভাবনা চলছিল, আলোচনা চলছিল। আর আমি সম্ভবত ধর্মেন্দ্রজির তরফে এই ছবি নিয়ে দেওয়া সব আইডিয়া ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। অন্যদিকে সানি লন্ডনে ছিলেন, এরপর তিনি রাজকুমার সন্তোষীকে ডাকেন। আমি রাজজিকে বলেছিলাম, ‘আপনি ধর্মেন্দ্রজির সঙ্গে কথা বলুন। উনি, আমাকে জানালেন নিশ্চিন্ত থাকতে, কারণ উনি এম রব্যাপারে কথা বলবেন। ও বাবা! পরের দিনই জানলাম, উনি-ই এবার এই ছবির পরিচালক হয়ে গিয়েছে!”

 

যদিও ২০২৩-এ এক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ববি দেওল বলেছিলেন, শেখর কাপুর  ২৭ দিন শুটিং করার পর ব্যান্ডিট কুইন বানানোর জন্য বেরিয়ে যান, আর ধর্মেন্দ্র এক মুহূর্ত দেরি না করে ছবিকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে  রাজকুমার সন্তোষীকে পরিচালনার দায়িত্ব দেন। ১৯৯৫ সালের বারসাত ছবিটি ববি দেওল ও টুইঙ্কল খান্নার বলিউডে অভিষেক ঘটায় এবং ৮ কোটির বাজেটে তৈরি হয়ে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৪ কোটি টাকা আয় করে।

 

শেখর কাপুর পরে ব্যান্ডিট কুইন (১৯৯৪) দিয়ে আন্তর্জাতিক প্রশংসা পান, এবং হলিউডে এলিজাবেথ সিরিজ পরিচালনা করে অস্কার মনোনয়ন অর্জন করেন ।বারসাত ছবিটি ভক্তদের কাছে বেশ সমাদৃত হয়েছিল সেই সময়ে। টুইঙ্কল খন্না ও ববি দেওলের বলিউডে অভিষেক, জুটির উষ্ণ রোম্যান্স, গানের মিষ্টি সুর, সব মিলিয়ে ছবিটি ৮ কোটি টাকার বাজেটে বানানো এই ছবি ২৯–৩৪ কোটি টাকা আয় করেছিল এবং সে বছরের সেরা পাঁচ বক্স -অফিস সফল ছবির তালিকায় উঠে গিয়েছিল ১৯৯৫-এ।

 

প্রসঙ্গত, গত মে মাসে চমকে দেওয়ার মতো মন্তব্য করেছিলেন শেখর। জানালেন—তাঁর ছবির জন্য আর অমিতাভ বচ্চন কিংবা শাহরুখ খানের দরকার নেই তাঁর! কারণ তিনি এখন নিজেই তারকা গড়ে তুলবেন, তাও আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই)সাহায্যে!

 

ওয়েভস সম্মেলনে (WAVES 2025)-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে শেখর কাপুর জানালেন, “আগামী দিনে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-ই তৈরি করবে তারকা। শুধু অভিনেতা নয়, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এমন চরিত্র বানানো যাবে যারা তারকার মতো আবেগ, ব্যক্তিত্ব ও ক্যারিশমা নিয়ে দর্শকের মনে জায়গা করে নেবে! আমি নিজের মনের মতো করে এমন একজন পুরুষ বা নারী চরিত্র তৈরি করব, যাকে দর্শক ভালবাসবে—এবং তার কপিরাইট থাকবে শুধু আমার কাছে।”

 

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান সময়ে সমাজমাধ্যমের বহু প্রভাবী-ই আর মানুষ নন, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাদিয়ে বানানো অবয়ব। তাহলে সিনেমার ক্ষেত্রেও কেন এমন হবে না? পরিচালক হিসাবে নিজের ছবির জন্য আর আমার অমিতাভ বচ্চনের প্রয়োজন নেই, আমি নিজেই তৈরি করব আমার অভিনেতা। শাহরুখ খানেরও প্রয়োজন নেই, কারণ আমার সিনেমায় আমি নিজেই গড়ে তুলব তারকা।”এই বক্তব্যের মাধ্যমে একদিকে যেমন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা-র সম্ভাবনাময় দিকটি সামনে এনেছেন শেখর, তেমনই অন্যদিকে সাবধানও করেছেন প্রযুক্তি নির্ভরতা নিয়ে। তাঁর মতে, “মানুষকে যে জিনিসটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা-র থেকে আলাদা করে তোলে, তা হল আবেগ এবং অনিশ্চয়তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা। জীবন যেমন রহস্যময়, সিনেমাও তেমন—আর সেই রহস্যটাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়।”