বলিউডে রাকেশ রোশন মানেই এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। অভিনয় থেকে পরিচালনা, প্রযোজনা থেকে চিত্রনাট্য সব ক্ষেত্রেই তাঁর শাসন স্পষ্ট। আর তাঁরই হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেন ছেলে হৃতিক রোশন। ২০০০ সালে রাকেশ পরিচালিত ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ আজও হৃতিকের কেরিয়ারের মাইলস্টোন। কিন্তু আমিশা প্যাটেলের বদলে এই ছবির নায়িকা হওয়ার কথা ছিল করিনা কাপুরের, যা আজও বলিউডের অন্দরমহলে এক চর্চিত অধ্যায়।
সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। করিনার নাম ঘোষণাও হয়ে গিয়েছিল, এমনকি কয়েকটা দৃশ্যও শুট করা হয়ে গিয়েছিল তাঁর সঙ্গে। ঠিক তখনই, শুটিং শুরুর মাত্র চার দিন আগে, হঠাৎ সবকিছু ওলটপালট। রাকেশ রোশন করিনাকে বাদ দিয়ে কাস্ট করলেন নতুন মুখ, আমিশা প্যাটেলকে!
কারণটা? রাকেশ রোশন নিজেই এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সেই কাহিনি। ২০২০ সালে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরিচালক বলেন, “আমরা শুট শুরু করতে যাচ্ছিলাম ফিল্মিস্তান স্টুডিওতে, একটা গানের দৃশ্য দিয়ে। ঠিক চার দিন আগে ববিতা বললেন, সংলাপ দিয়ে শুরু করা হোক, গান নয়—কারণ করিনা নাকি এখনই প্রস্তুত নয়।”
কিন্তু রাকেশ তাতে রাজি হননি। তাঁর মতে, গানের দৃশ্যেই নতুন অভিনেত্রীর পক্ষে ক্যামেরার সামনে স্বচ্ছন্দ হওয়া সহজ। “ববিতা একটু জেদ দেখালেন,” বলেন রাকেশ। “তখন আমি বলেছিলাম—এইভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। আজ এটা বলবেন, কাল ওটা। বন্ধুত্ব থাক, কাজ না হোক।”
এরপরই সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়তে থাকে। আর এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “অনেকে বলেছে করিনাকে নাকি পুরো গল্প বলা হয়নি। এটা একেবারেই ভুল। আমি কোনও অভিনেতাকে সাইন করি না সম্পূর্ণ ন্যারেশন না দিয়ে। বিশেষত নায়িকাকে তো নয়ই। তিন মাস আগেই পুরো গল্প বলা হয়েছিল।”
রাকেশ রোশন আরও দাবি করেন, করিনার মা ববিতা অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করছিলেন মেয়ের কেরিয়ারে। তাঁর কথায়, “ববিতা যদি করিনার কেরিয়ারে এতটা হস্তক্ষেপ না করতেন, ওর পক্ষে আরও ভাল হত। করিনা তখন নবাগত, তাঁকে সেই জায়গা থেকেই শুরু করতে হত। করিশ্মার বোন বলে সব সময় নিজের মত চাপিয়ে দেওয়া যায় না।”
সবচেয়ে বড় ফাটল ধরেছিল ক্রেডিট কার্ড টাইটেলে কার নাম আগে যাবে তা নিয়ে। ববিতা চেয়েছিলেন, করিনার নাম যেন ছবির টাইটেলে হৃতিকের আগে আসে। কিন্তু রাকেশ তাতে রাজি হননি। যুক্তি দিলেন—“ছবির নায়কই তো মুখ, বিশেষ করে নিজের প্রযোজনায়।”
পরিস্থিতি এমন জটিল হয়ে পড়ে যে রাকেশ রোশন সিদ্ধান্ত নেন গ্রিস উড়ে যাবেন লোকেশন দেখতে, এবং ততদিনের মধ্যে করিনার পক্ষ থেকে চূড়ান্ত জবাব আসুক। ফিরে এসে দেখেন, কোনও উত্তরই নেই। সেখানেই চূড়ান্ত হয় বিচ্ছেদ।
করিনা কাপুরের জায়গায় কাস্ট করা হয় নতুন মুখ আমিশা প্যাটেলকে-আর বাকিটা ইতিহাস। ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’ মুক্তি পেয়ে হয়ে ওঠে এক যুগান্তকারী রোমান্টিক হিট। বক্স অফিসে সাফল্য, দর্শকের উন্মাদনা - সব মিলিয়ে বলিউডে নতুন তারকা হৃতিক রোশনের জন্ম হয়।
আর করিনা? তাঁর ডেবিউ হয় ‘রিফিউজি’ দিয়ে, অভিষেক বচ্চনের বিপরীতে। যদিও সেই প্রথম ছবির ইতিহাসে রয়ে গেছে এক চিরস্মরণীয় ‘যদি হত’! যদি করিনা কাপুর সত্যিই ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়’-এর নায়িকা হতেন, তাহলে কি বলিউডের মানচিত্রটা একটু অন্যরকম হত?
