বলিউড অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীর জীবন গত কয়েক বছরে এক ঝোড়ো অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর মাদক মামলায় তাঁর নাম জড়িয়ে যায় এবং তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এমনকী হাজতবাসও হয়েছিল অভিনেত্রীর। জীবনের সেই কঠিন সময়ে, যখন সবকিছু একেবারেই অন্ধকারময় মনে হচ্ছিল, তখনই ঘটে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা।
রিয়া সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, জেলে থাকা মহিলাদের সঙ্গে তিনি একবার প্রাণ খুলে ‘নাগিন ডান্স’ করেছিলেন, যা আজও তাঁর জীবনের অন্যতম আনন্দময় মুহূর্ত হয়ে আছে।
রিয়া জানান, প্রথমে জেলে কাটানো দিনগুলো তাঁর কাছে দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। তিনি একেবারেই ভেঙে পড়েছিলেন, মনোবল হারিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু জেলের ভেতরে থাকা মহিলারা তাঁকে ঘিরে ধরে খানিকটা আলোর ঝলক দেখিয়েছিলেন। তাঁদের সবার জীবনই ছিল কষ্টে ভরা, তবুও তাঁরা ছোট ছোট জিনিসে আনন্দ খুঁজে নিতে জানতেন। রিয়ার জামিন পাওয়ার আগের রাতে কয়েকজন মহিলা বন্দী তাঁকে নাচতে অনুরোধ করেন। রিয়া প্রথমে রাজি হননি, কারণ তিনি ভেতর থেকে ভেঙে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর তিনি ভাবলেন, হয়তো আর কোনওদিন এই মহিলাদের সঙ্গে দেখা হবে না, তাঁদের জন্য কিছু আনন্দের মুহূর্ত তৈরি করলে ক্ষতি কী!
এরপরই তিনি তাঁদের সঙ্গে শুরু করেন জনপ্রিয় ‘নাগিন ডান্স’। সবাই মিলে হাসি-ঠাট্টার সঙ্গে নাচতে শুরু করেন। অন্ধকার, ভয় আর দুঃখে ভরা পরিবেশে হঠাৎ সেই মুহূর্ত যেন আলো ছড়িয়ে দেয়। চারপাশ ভরে ওঠে হাসি আর উল্লাসে। রিয়ার নিজের কাছেও তা ছিল মুক্তির মতো অনুভূতি। তিনি বলেন, “সেই মুহূর্তটা আমার জীবনের সবচেয়ে উঁচু বিন্দু ছিল। আজও মনে হয়, জেলের ভেতরে ওই কয়েক মিনিটে আমি সত্যিই আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলাম।”
রিয়া আরও জানান, জেলে থাকার অভিজ্ঞতা তাঁকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। তিনি বুঝেছেন, মানুষের জীবন যত কঠিন হোক না কেন, সামান্য সুখের মুহূর্ত ছিনিয়ে নিতেই হয়। আনন্দ মানে সবসময় বড় কিছু নয়, বরং সামান্য হাসি, কিছুটা ভালোবাসা, কিংবা কয়েকজন মানুষের সঙ্গে খোলা মনে সময় কাটানোই আসল আনন্দ।
তাঁর মতে, জেলে কাটানো সময় ছিল জীবনের এক বড় শিক্ষা। সেখানে তিনি দেখেছেন, মানুষ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও হৃদয়ের ভেতর মানবিকতা মরে যায় না। বরং দুঃখের ভেতরেই মানুষ অনেক সময় সবচেয়ে সত্যিকারের আনন্দ খুঁজে পায়।
আজও যখন রিয়া সেই দিনগুলোর কথা মনে করেন, তখন তাঁর চোখে ভেসে ওঠে জেলের ভেতরে মহিলাদের সঙ্গে হাসতে হাসতে করা ‘নাগিন ডান্স’। সেই অভিজ্ঞতা তাঁকে মনে করিয়ে দেয়, জীবন যতই অন্ধকারময় হোক না কেন, আনন্দ খুঁজে নেওয়ার ক্ষমতা যদি ভেতরে থাকে, তবে আশা কখনও নিভে যায় না।
