বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে চিঠি লেখায় বিতর্কের মুখে দিল্লি পুলিশ। বঙ্গভবনে পাঠানো একটি চিঠিতে বাংলা ভাষাকে বাংলাদেশি ভাষা বলে উল্লেখ করেছে তারা। দিল্লি পুলিশের ওই চিঠিতে লেখা হয়েছে, তাদের বাংলা অনুবাদক দরকার। কয়েকদিন আগে দিল্লি পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে ৮ জনকে আটক করে। তাঁদের কাছ থেকে বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আর সেসব নথিগুলি বাংলা ভাষায় লেখা। সেসব নথির তথ্য যাচাইয়ের জন্য একজন অনুবাদক প্রয়োজন। চিঠিতে লেখা, ‘বাজেয়াপ্ত হওয়া নথিগুলি বাংলাদেশি ভাষায় লেখা এবং সেগুলি হিন্দি এবং ইংরাজিতে অনুবাদ করা দরকার। আমাদের এমন একজন অনুবাদক দরকার যিনি বাংলাদেশি ভাষায় দক্ষ’। আর চিঠির এই অংশকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। চিঠিটিকে টুইট করে দিল্লি পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি। এবার এক্স হ্যান্ডলে দিল্লি পুলিশের সেই বিতর্কিত চিঠিটি পোস্ট করে ক্ষোভ উগরে দিলেন বাংলার রকস্টার রূপম ইসলাম।
রূপম লেখেন, ‘এটা কী হচ্ছে? বাংলা ভাষা কি দেশের ২২টা ভাষার একটি নয়? কেন বাংলা বললেই বাংলাদেশি তকমা এঁটে দেওয়া হচ্ছে? এটা যেমন অজ্ঞতা তেমনই অত্যন্ত মূর্খামির পরিচয়। ধিক্কার!’
What is this? Isn’t BANGLA one of the 22 official languages of India? Why must it be mentioned as BANGLADESHI LANGUAGE? Height of Ignorance and stupidity. pic.twitter.com/iBS4WPomcx
— rupam islam (@rupamislam74)Tweet by @rupamislam74
গত কয়েকমাস ধরেই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর বিভিন্ন রাজ্যে অত্যাচারিত হওয়ার অভিযোগ উঠছে। বাংলা ভাষায় কথা বলায় তাঁদের বাংলাদেশি সন্দেহে অত্যাচার করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ। কখনও মারধর, কখনও তাঁদের উপর হামলা, লুটপাট, উপার্জন কেড়ে নেওয়া, কখনও আবার পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেওয়ার মতো অভিযোগ শোনা গিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে এক্স হ্যান্ডেলে চিঠিটি পোস্ট করে মমতা ব্যানার্জি লিখেছিলেন, ‘বাংলা, আমাদের মাতৃভাষা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দের ভাষা, সেই ভাষা যাতে আমাদের দেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং জাতীয় গান (যার রচয়িতা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) রচিত হয়েছে, কোটি কোটি ভারতীয় যাঁরা এই ভাষায় কথা বলেন ও লেখেন, এবং যে ভাষাকে ভারতের সংবিধান স্বীকৃতি দিয়েছে — সেই ভাষাকে এখন ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলা হচ্ছে! দেশবিরোধী, অসাংবিধানিক, অপমানজনক! এটা সমস্ত ভারতীয় বাঙালির অপমান। এমন ভাষা ব্যবহার করে আমাদের সম্মানকে যে ভাবে হেয় করা হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা অবিলম্বে এই বাংলাবিদ্বেষী কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর প্রতিবাদের দাবি করছি। যারা এভাবে সংবিধানবিরোধী ভাষা ব্যবহার করে ভারতের বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের অপমান ও হেয় করছে’। এর আগে ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন মমতা। ২৭ জুলাই থেকে বাংলার ব্লকে ব্লকে এই মিছিল, ধরনা কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
ভিন রাজ্যে ‘অত্যাচারিত’ বাংলাভাষীদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বাংলার বাইরে অত্যাচারিত হচ্ছেন তাঁদের অনুরোধ করব ফিরে আসুন। বলুন কবে আসবেন? আমরা নিয়ে আসব। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করব। যখন ওরা চায় না তখন চলে আসুন’।
