আজকাল ওয়েবডেস্ক: বারবার চেষ্টা করেও ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ওদিক থেকে উত্তর আসছে 'সুইচড অফ'। বাংলায় কথা বলার জন্য কি ভিন রাজ্যে গ্রেপ্তার হল ছেলে? আতঙ্কে এরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের বাবা-মা। কীভাবে ছেলেকে ফিরে পাবেন জানেন না তাঁরা। আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, এলাকার সাংসদ ও বিধায়কের কাছে। সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শনিবার তাঁদের বাড়ি যান রাজ্যের পরিবহন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় বিধায়ক দিলীপ মণ্ডল। কথা বলেন পরিবারের সঙ্গে। পাশে থাকার বার্তাও দেন। এমনকী চার সদস্যের প্রতিনিধি দলকে মুম্বাই পাঠানোর কথাও জানিয়েছেন তিনি।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিষ্ণুপুর থানার জুলপিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাবাই সরদার বছর দুই আগে কাজের খোঁজে মুম্বই গিয়েছিলেন। সেখানেই কাজ পেয়ে তিনি থেকে যান। গত শুক্রবার তাঁর সঙ্গে বিষ্ণুপুরে তাঁর পরিবারের সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয়। এরপরেই বাবাইয়ের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাঁর পরিবারের। তাঁর বাবা দেবু সরদার বলেন, তিনি এবং তাঁর স্ত্রী ঘরে বসে টিভি দেখছিলেন। হঠাৎ টিভিতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি লোকজনের সঙ্গে তাঁর ছেলেকে বসানো হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ছেলেকে ফোন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যায়নি।
আরও পড়ুন: বোনের দু'বার বিয়ে, একটিও টেকেনি! লক্ষ লক্ষ টাকা ঢেলেও পরিবারের সুনাম নষ্ট, রাগের মাথায় দাদা যা করল
বাবাইয়ের বাবার কথায়, 'আমরা গরীব মানুষ। পড়াশোনা ঠিকমতো জানি না। কোথায় যেতে হবে বা কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে তার কিছুই বুঝতে পারছি না। আশা করব সরকার আমাদের পাশে থাকবে এবং ছেলেকে ফিরিয়ে দেবে।' তাঁর স্ত্রী রিতা সরদার বলেন, 'দু'একদিন ছাড়া ছাড়াই ছেলে ফোন করত। গত শুক্রবারও ফোনে কথা হয়। ছেলে জানিয়েছিল ভালো আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম তোর ওখানে কি বাংলায় কথা বললে কেউ কিছু বলছে? উত্তরে দেখলাম ছেলে শুধু বলল ভালো আছি। এরপরেই টিভিতে দেখি ১০৬ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে আটকে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে আমার ছেলের ছবিও আছে। একসপ্তাহ ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারিনি। কোথায় আছে বা কীভাবে আছে কিছুই জানি না।'
স্থানীয় বিষ্ণুপুর থানার তরফে বিষয়টি জানার পর বাবাইয়ের বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। পাশাপাশি জুলপিয়া গ্রামের গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানও খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সবরকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই মহারাষ্ট্রে মৃত্যু হয় এক বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের। ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে পুণেতে মৃত্যু হয়েছে রায়গঞ্জের এক পরিযায়ী শ্রমিকের। যুবকের নাম টিপু দাস। তাঁর পরিবার মৃত্যু কারণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায়। পরিজনদের দাবি, ছবি দেখে মনে হচ্ছে মৃত্যুর কারণ স্বাভাবিক নয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজগঞ্জ ব্লকের বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের আমবাড়ি ফালাকাটা গোকুলভিটা গ্রামের বাসিন্দা দিপু দাস ১৫ বছর ধরে ভিনরাজ্যে কাজ করে সংসার চালাতেন। দু’মাস আগে তিনি পুণেতে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন। সোমবারই মারা গিয়েছিলেন দীপুর মা। সেই খবর পরিবারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছিল দীপুর ঠিকাদারকে। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে পুণে থেকে খবর আসে দীপু মারা গিয়েছেন। পরিবারকে জানানো হয়, কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পরে মারা গিয়েছেন তিনি। পরে ছবি পাঠানোর পর দেখতেন পান দীপুর গলায় ধারালো অস্ত্রের দাগ রয়েছে। এতে সন্দেহ আরও বেড়ে যায়।
কিছুদিন আগেই মহারাষ্ট্রের ভাসি থানার ওয়াসিগাওতে নৃশংসভাবে খুন করা হল বাংলার পরিযায়ী শ্রমিককে। কুপিয়ে খুনের পর তাঁর দেহ একটি বস্তায় ভরে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার কফিনবন্দি সেই দেহ এল তাঁর বাড়িতে। মৃত শ্রমিক আবুবক্কর মণ্ডল (৩৩) উত্তর ২৪ পরগণার বাদুড়িয়ার বাসিন্দা ছিলেন।
