আজকাল ওয়েবডেস্ক: লাগাতার বর্ষণে উত্তর-পূর্ব ভারতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বন্যা ও ভূমিধস পরিস্থিতি। আসাম, মণিপুর এবং নাগাল্যান্ড রাজ্যগুলি সেনাবাহিনীর কাছে ত্রাণ ও উদ্ধার সহায়তার আবেদন জানায়। এরপর ১০ জুলাই সেনা ও আসাম রাইফেলস চালু করে ‘অপারেশন জল রাহাত ২’। সেনার এক বিবৃতিতে জানানো হয়, এই তিন রাজ্যে ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনী ৪০টি ত্রাণ কলাম মোতায়েন করেছে এবং এখন পর্যন্ত ৩,৮২০ জনকে উদ্ধার করেছে। এছাড়া বিতরণ করা হয়েছে ১,৩৬১টি খাদ্যপ্যাকেট, ১৫,৪২১টি  বোতল এবং চিকিৎসা সহায়তা পেয়েছেন ২,০৯৫ জন।

আসামে সবচেয়ে বেশি প্রভাব, মৃত্যু বেড়ে ৩০

আসামের কর্বি আংলং, নগাঁও, গোলাঘাট, হোজাই ও যোরহাট জেলার ৩০,০০০-র বেশি মানুষ এখনো জলবন্দি। ৮ জুলাই গোলাঘাটে একজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে আসামে বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন মাসেই অসমের ২১টি জেলায় অন্তত ৬.৩৩ লক্ষ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই রাজ্যে ভূমিধসে মৃত অন্তত পাঁচজন, যার মধ্যে গৌহাটির আশেপাশেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

অন্য রাজ্যগুলির পরিস্থিতিও সংকটজনক

মণিপুরের ইমফল ও বিষ্ণুপুর জেলায় নাম্বল নদীর জলস্তর বেড়ে অনেকেই গৃহহীন হয়েছেন। নাগাল্যান্ডের দিমাপুরেও প্রবল বৃষ্টি ও হড়পা বান জনজীবন স্তব্ধ করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অরুণাচল প্রদেশে ভূমিধসে আরও দুইজনের মৃত্যু হয়েছে সোমবার রাতে। ফলে আট উত্তর-পূর্ব রাজ্যে বৃষ্টিজনিত দুর্যোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭। এর মধ্যে ১২ জন অরুণাচলে, ৬ জন করে মেঘালয় ও মিজোরামে, ৩ জন সিকিমে, ২ জন ত্রিপুরায় এবং ১ জন নাগাল্যান্ডে মারা গেছেন। প্রতিবেদন আরও জানাচ্ছে, বন্যার তুলনায় বেশি প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে ধস, পাথর খসা ও ভূমিক্ষয়। গত সপ্তাহেই ৭০০-র বেশি ধসের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে মিজোরামে ৫৫২টি এবং মণিপুরে ৯৩টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে।

 

কেন্দ্রীয় সহায়তা: ৬ রাজ্যকে ১,০৬৬ কোটি বরাদ্দ

১০ জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বন্যা ও ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ছয় রাজ্যকে মোট ১,০৬৬ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরাখণ্ড সর্বোচ্চ ৪৫৫.৬০ কোটি পাবে, আসাম পাবে ৩৭৫.৬০ কোটি। এছাড়া মণিপুর পাবে ২৯.২০ কোটি, মিজোরাম ৩০.৪০ কোটি এবং মেঘালয় ২২.৮০ কোটি। কেরলকেও দেওয়া হবে ১৫৩.২০ কোটি। সরকার জানিয়েছে, আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি জমিতে এনডিআরএফ, সেনা এবং বিমানবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে ২১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১০০-র বেশি এনডিআরএফ দল কাজ করছে।

আরও পড়ুন: নেশার চোটে টালমাটাল হাতি, বানর, শূকর! গঙ্গাফড়িং, গুটিপোকাও চিৎপটাং! দূর থেকে মজা নিল শকুনের দল, ভাইরাল ভিডিও 

হিমাচল প্রদেশ বাদ! প্রশ্ন তুলছে বিশ্লেষকরা

অপরদিকে, হিমাচল প্রদেশেও প্রবল বৃষ্টিতে ব্যাপক ধস ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে — জুন ২০ থেকে এখন পর্যন্ত মৃত কমপক্ষে ৮০। অথচ এই রাজ্যকে কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পরিবেশবিদরা। উত্তর-পূর্বের পরিস্থিতি এখনও স্থিতিশীল নয়। আবহাওয়া দফতর আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। সেনা ও এনডিআরএফের তৎপরতায় আপাতত স্বস্তি মিললেও রাজ্যগুলিতে নতুন করে বিপদের আশঙ্কা রয়েই গেছে।