আজকাল ওয়েবডেস্ক: জলবায়ু আন্দোলনের মুখ সোনম ওয়াংচুকের স্ত্রী গীতাঞ্জলি জে আংমো সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা এক হলফনামায় চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন—রাজস্থান পুলিশ এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) তাঁকে যোধপুর ও দিল্লিতে গোপনে নজরদারি করেছে। ওয়াংচুকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে তাঁকে পুলিশের ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
আংমোর অভিযোগ, সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে দিল্লিতে তাঁর উপর ক্রমাগত নজরদারি চালানো হচ্ছে। “৩০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করার পর থেকেই আমি দেখছি, যেখানেই যাই না কেন, একটি গাড়ি ও একটি মোটরবাইক আমার পিছু নেয়।’’ — হলফনামায় লিখেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ডেটিং অ্যাপে প্রতারণার ফাঁদ বাড়ছে শহরে! কলকাতায় বড়সড় চক্রের হদিস পেল পুলিশ
গীতাঞ্জলি আংমো জানান, ৭ ও ১১ অক্টোবর যোধপুরে স্বামী সোনম ওয়াংচুকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁকে বিমানবন্দর থেকেই পুলিশি পাহারায় নিয়ে যাওয়া হয়। “বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে এক পুলিশ গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার পৌঁছানোর সময় ও যাত্রাপথের সব তথ্য আগেভাগে শেয়ার করতে বলা হয়েছিল,” বলেন আংমো।
যোধপুর জেলের ভেতরে সাক্ষাতের সময়ও পুলিশের উপস্থিতি ছিল বলে তিনি দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, “আমার সঙ্গে দেখা করার সময় এক ডেপুটি কমিশনার অফ পুলিশ, মঙ্গলেশ নামে এক কর্মকর্তা, এবং এক মহিলা কনস্টেবল খুব কাছাকাছি বসে আমাদের কথোপকথনের নোট নিচ্ছিলেন।”
তিনি আরও জানান, সাক্ষাতের পর তাঁকে শহরে কারও সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। “ট্রেন ছাড়ার আগে কয়েক ঘণ্টা সময় ছিল। কিন্তু আমাকে সোজা রেলস্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি ওই কর্মকর্তারা ট্রেনে চড়ে আমার সঙ্গে মেরতা রোড জংশন পর্যন্ত যান।”
গীতাঞ্জলি আংমোর দাবি, একজন নাগরিক হিসেবে তিনি স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাতের অধিকার রাখেন। “আমার সঙ্গে স্বামীর ব্যক্তিগত কথোপকথন অন্য কেউ শুনবে, এ অধিকার কারও নেই। এ ধরনের নজরদারি আমার সংবিধানসিদ্ধ অধিকার—ভারতীয় সংবিধানের ১৯ ও ২১ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন,” বলেন তিনি।
আংমো তাঁর পিটিশনে আরও উল্লেখ করেছেন যে, সোনম ওয়াংচুকের উপর জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ) ধারা ৩(২) অনুযায়ী আটক আদেশ সম্পূর্ণ বেআইনি। তাঁর দাবি, এই আটক আদেশের সঙ্গে প্রকৃত জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার কোনও সম্পর্ক নেই, বরং এটি একজন সম্মানিত পরিবেশবিদ ও সমাজ সংস্কারকের কণ্ঠ রোধ করার প্রচেষ্টা।
লাদাখে রাজ্যর দাবিতে চলা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ সেপ্টেম্বর জলবায়ু কর্মী সোনম ওয়াংচুককে রাজস্থান পুলিশের মাধ্যমে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাঁকে যোধপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
গীতাঞ্জলি আংমো এরপর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন স্বামীর আটকাদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। আদালত তাঁকে স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি দিলেও, সেই মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের অনেকেই এই ঘটনাকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, একজন বন্দির পরিবারের সদস্যকে নজরবন্দি করা ও কথোপকথন পর্যবেক্ষণ করা গণতান্ত্রিক নীতির পরিপন্থী।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি বিচারাধীন। আদালত যদি রাজস্থান সরকার ও কেন্দ্রের কাছ থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা তলব করে, তবে এটি হতে পারে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ নজির।
