আজকাল ওয়েবডেস্ক:  বিহারের মোকামা আসনে নির্বাচন প্রচারের মধ্যেই হিংসার ঘটনায় রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। রবিবার ভোরে বিতর্কিত প্রাক্তন জেডিইউ বিধায়ক অনন্ত সিং-কে গ্রেপ্তার করেছে পাটনা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার জন সুরাজ পার্টির কর্মী দুলারচন্দ যাদব খুনের ঘটনায় এই গ্রেপ্তারি করা হল। 


পাটনার এসএসপি কার্তিকেয় শর্মার নেতৃত্বে একদল পুলিশ বারহ এলাকার অনন্ত সিংয়ের বাড়িতে হানা দিয়ে তাঁকে আটক করে। তাঁকে পরে পাটনায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অনন্ত সিং ছাড়াও আরও দুইজন—মানিকান্ত ঠাকুর ও রঞ্জিত রামকেও এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনজনকেই শীঘ্রই আদালতে পেশ করা হবে।


দুলারচন্দ যাদব বৃহস্পতিবার মোকামায় জন সুরাজ প্রার্থী পীয়ূষ প্রিয়দর্শীর প্রচারে অংশ নিতে গিয়ে হামলার শিকার হন। তাঁর ফুসফুস ফেটে যায় এবং একাধিক পাঁজর ভেঙে যাওয়ায় মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তে গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নাকচ করা হয়েছে, যা এই মৃত্যুকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছে।


শনিবার রাতে এক যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে পাটনার জেলা প্রশাসক থায়াগারাজন এসএম ও এসএসপি কার্তিকেয় শর্মা বলেন, “এই ঘটনায় আনন্দ সিং, মানিকান্ত ঠাকুর ও রঞ্জিত রামকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এটি হত্যাকাণ্ড বলেই প্রমাণিত।”


প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এবং সেই সময়ই যাদবের মৃত্যু ঘটে। ঘটনাস্থলে অনন্ত সিং ও তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন বলেও পুলিশ জানিয়েছে।


জন সুরাজ প্রার্থী পীয়ূষ প্রিয়দর্শী বলেন, “পুলিশের পদক্ষেপ স্বাগত। তবে এটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। অনন্ত সিং আজও ৫০টি গাড়ির মিছিল নিয়ে প্রচার করছিলেন। এফআইআর হওয়ার পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা উচিত ছিল। এখন অন্তত তদন্তটা যেন নিরপেক্ষভাবে হয়, সেটাই আমাদের দাবি।” অনন্ত সিং, যিনি বহুবার মোকামা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন, বর্তমানে জেডিইউ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর স্ত্রী নীলম দেবী বর্তমান বিধায়ক। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগেও তাঁর বিরুদ্ধে আলাদা মামলা হয়েছে।


পুলিশ তিনটি আলাদা এফআইআর দায়ের করেছে। এর মধ্যে একটিতে দুলারচন্দ যাদবের নাতি সরাসরি অনন্ত সিং এবং আরও চারজনের নাম উল্লেখ করেছেন। অপর দুটি অভিযোগ বিপক্ষ শিবির ও পুলিশের নিজস্ব তদন্তের ভিত্তিতে দায়ের হয়েছে।


অন্যদিকে, অনন্ত সিং দাবি করেছেন, এই আক্রমণ ছিল তাঁকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র। তাঁর অভিযোগ, “এই হামলার পিছনে রয়েছেন আরজেডি প্রার্থী বীণা দেবীর স্বামী, প্রাক্তন সাংসদ সুরজ ভান সিং। আমরা ভোট চেয়ে বেরিয়েছিলাম, তখন তাঁদের লোকজন আক্রমণ করে। এই পুরো ঘটনা সাজানো।”


ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন পাটনার জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে। কমিশন পাটনার গ্রামীণ এসপি বিক্রম সিহাগকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে এবং বারহ মহকুমার তিনজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
বারহের এসডিও এবং দুই এসডিপিও-কে বদলি করা হয়েছে। বারহ-২ মহকুমার এসডিপিও অভিষেক সিং-কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শুক্রবার জেলা প্রশাসক ও এসএসপি মোকামা ও বারহ এলাকায় পরিদর্শন করে প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং আচরণবিধি কঠোরভাবে মানার নির্দেশ দেন।


বিহারে দুই দফায় ভোট হবে ৬ ও ১১ নভেম্বর। ভোট গণনা ১৪ নভেম্বর নির্ধারিত। মোকামার এই হিংসার ঘটনা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনীতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।