আজকাল ওয়েবডেস্ক: এবার আত্মসমর্পণ করলেন নিষিদ্ধ সিপিআই (মাওবাদী)-র পলিটব্যুরো সদস্য তথা নিহত কিষেনজির ছোট ভাই মাল্লুজুলা বেণুগোপাল রাও। একইসঙ্গে আত্মসমর্পণ করেছেন তাঁর ৬০ জন সহযোগী। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) হারাল তার পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে। সংগঠনে বেণুগোপাল সোনু নামেও পরিচিত ছিলেন। 

শীর্ষ মাওবাদী নেতা বেণুগোপাল রাও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের উপস্থিতিতে অস্ত্র সমর্পণ করেন। উল্লেখ্য, গত মাসেই আত্মসমর্পণ করেছিলেন কিষেনজির স্ত্রী। তার আগে, গত বছরই বেণুগোপালের স্ত্রী বিমলা চন্দ সিদাম বা তারাক্কা আত্মসমর্পণ করেছিলেন। সেই ঘটনার ১০ মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণ করলেন বেণুগোপালও। 

আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের মতে, সশস্ত্র সংগ্রামের প্রতি তাদের মোহভঙ্গ ঘঠেছে। ফলে, সমাজের মূল স্রোতে ফিরতেই তাদের এই পদক্ষেপ। ছত্তিশগড়ের উপ-মুখ্যমন্ত্রী বিজয় শর্মা এই আত্মসমর্পণের ঘটনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, "বাস্তারের মানুষ নকশালবাদের অবসান ঘটাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এক বছর আগে বেণুগোপালের স্ত্রী আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আজ তাঁর স্বামীর আত্মসমর্পণ পরিবর্তিত বাস্তবতাকে তুলে ধরছে। প্রশাসন হিংসা ত্যাগকারীদের পুনর্বাসন করবে, কিন্তু যারা সশস্ত্র প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করবে  নিরাপত্তা বাহিনী।" 

কিষেণজির মৃত্যুর পর, সোনু পশ্চিমবঙ্গে অপারেশন গ্রিন হান্টের বিরুদ্ধে সিপিআই (মাওবাদী)-এর সশস্ত্র প্রতিরোধের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। 

২০২৬ সালের মধ্যে মাওবাদী-নুক্ত ভারত গঠনই কেন্দ্রের লক্ষ্য। এই জন্য মাও অধ্যুষিত ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানার বিস্তীর্ণ এলাকায় সরকারের যৌথ বাহিনীর অভিযানের পর একের পর এক মাওবাদী আত্মসমর্পণ করছেন। এর মধ্যেই ছত্তিশগড়ের বিজাপুরে সোমবার মাওবাদীদের হাতে খুন হন বিজেপি কর্মী সত্যম। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি চিঠি পেয়েছে। তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, পুলিশের জন্য যোগাযোগ রাখার দায়ে ওই বিজেপি নেতাকে খুন হতে হয়েছে।

এসবের মধ্যেই নিহত কিষেনজির ছোট ভাই মাল্লুজুলা বেণুগোপাল রাও-য়ের আত্মসমর্পণ নিষিদ্ধ মাওবাদী সংগঠনের কাছে বড় ধাক্কা। 

মাওবাদী সাংগঠনিক কাঠামোয় বেণুগোপাল রাও-কে একজন গুরুত্বপূর্ণ কৌশলবিদ এবং আদর্শবাদী হিসেবে বিবেচনা করা হত। দলের এই পলিটব্যুরো সদস্য বেশিরভাগ সময়েই ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা এবং ওড়িশার কিছু অংশ-সহ মধ্য ভারতের গভীর বনাঞ্চল থেকে দলীয় কাজ পরিচালনা করতেন।

যৌথ বাহিনী জানিয়েছেন, বেণুগোপাল তথা সোনু এই বছরের শুরুতে আত্মসমর্পণের জন্য তাঁর ইচ্ছের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ১৫ আগস্ট এক প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে তাঁর আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। পরে জানা যায় যে, তিনি বিভিন্ন রাজ্যের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মাওবাদী ক্যাডারের সমর্থন পেয়েছেন। তাঁর আত্মসমর্পণ বামপন্থী চরমপন্থা-প্রভাবিত এলাকায় শান্তি আরও সুসংহত করার এবং চলমান যোগাযোগ ও পুনর্বাসন উদ্যোগগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য একটি জানালা খুলে দিল বলে মনে করা হচ্ছে।

নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী) সম্প্রতি সরকারের কাছে এক মাসের যুদ্ধবিরতি চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। সরকার তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

কয়েকদিন আগে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, মাওবাদীদের সঙ্গে সরকারের আলোচনার কোনও কারণ নেই। তিনি বলেছিলেন যে, বিদ্রোহীদের অস্ত্র রেখে আত্মসমর্পণ করতে হবে, বদলে তারা সরকারের দেওয়া আকর্ষণীয় পুনর্বাসন প্যাকেজের সুবিধা পাবে।