আজকাল ওয়েবডেস্ক:  ২০০৪ সালের বিখ্যাত হলিউড কমেডি White Chicks সিনেমায় যেমন দুই কৃষ্ণাঙ্গ এফবিআই এজেন্ট শ্বেতাঙ্গ ধনী নারী সেজে এক অপহরণ কাণ্ডের তদন্তে নামে, বাস্তবে এবার সেই ছায়াতেই তিন আফ্রিকান যুবক ঘটালেন দুঃসাহসিক এক কাণ্ড। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে—তিন যুবক আরব নারীর মতো পোশাক পরে, ঘন মেকআপ ও হিজাবে নিজেদের রীতিমতো রূপান্তরিত করেছেন। উদ্দেশ্য—দুবাইয়ে প্রবেশ করে উন্নত জীবনের খোঁজে পাড়ি দেওয়া।

তবে তাঁদের এই ‘সাজগোজ’ আলজেরিয়ার সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি। নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া নজরে ধরা পড়ে যায় যে তাঁদের হাঁটাচলা, চোখের ভাষা, এমনকি জুতোর মাপও নারীদের সঙ্গে মিলছে না। একজন অফিসার বলেন, “তাঁরা এতটা মেকআপ করেছিল যে প্রথমে সন্দেহ হয়নি, কিন্তু যখন একজন হাঁচি দিল, গলার আওয়াজে সব ফাঁস!”

 আরও পড়ুন: পুরুলিয়ার সভাধিপতির ধানখেতে ধান রোপণের নজির, বললেন— “মাটির টান ভুলতে পারি না”

তবে আলজেরিয়ান কর্তৃপক্ষ তাঁদের কথাবার্তা, চলাফেরা এবং কিছু অস্বাভাবিক আচরণের মাধ্যমে ধরতে সক্ষম হন। পুলিশ পরে নিশ্চিত করেন, এরা কোনও মহিলাই নন—বরং তিনজন পুরুষ। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে এমন প্রতারণামূলক কাজকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। UAE-র ফেডারেল ডিক্রি-আইন নং ৩৪/২০২১ অনুযায়ী, অন্য কারও ছদ্মবেশ ধারণ করলে বা কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করলে, দোষী ব্যক্তিকে এক মাস থেকে তিন বছর পর্যন্ত জেল এবং ৫০,০০০ দিরহাম থেকে ২,০০,০০০ দিরহাম পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে। এই ঘটনার একটি ভিডিও ইতিমধ্যেই TikTok-এ ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে—তিন যুবককে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা ঘন মেকআপ, আরবীয় পোশাক (আবায়া ও হিজাব) পরে মহিলার ছদ্মবেশ ধারণ করেছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল দুবাইয়ে পৌঁছে নতুন জীবনের সূচনা করা। কারণ, তাঁদের মতে, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (UAE) একটি সমৃদ্ধ দেশ যেখানে উদ্যোক্তাদের জন্য প্রচুর সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিছুজন আবার মজা করে বলছেন, “দুবাই পৌঁছাতে না পারলেও ভাইরাল হতে তো পারল!” কারো মতে, “এদের চেহারা দেখে সন্দেহ হয়নি, কিন্তু হাঁটার ভঙ্গি আর গলার স্বরেই শেষ।” তবে এই ঘটনাটি নিছক কৌতুক নয়। আরব আমিরশাহিতে প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণকে কঠোরভাবে দেখা হয়। ফেডারেল ডিক্রি-আইন ৩৪/২০২১ অনুযায়ী, এমন কাজের শাস্তি হতে পারে এক মাস থেকে তিন বছর জেল এবং ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ দিরহাম জরিমানা।

এই তিন যুবক যে দেশ থেকেই হোন না কেন—নাইজেরিয়া বা মালি—তাঁদের গল্প একটা গভীর সত্যকে সামনে আনে: উন্নত জীবনের জন্য হাজারো তরুণ প্রতিদিন প্রাণ হাতে করে রওনা দেয়। কেউ জলে, কেউ মরুভূমিতে, কেউবা নারীর ছদ্মবেশে। কিন্তু জীবন সিনেমা নয়। এবং ছদ্মবেশ যত নিখুঁত হোক না কেন, বাস্তবের পর্দা ফাঁস হতেও সময় লাগে না। এই তিন ‘ভাইরাল বোন’-এর কাহিনী হয়তো আজ হাসির খোরাক, কিন্তু এর নেপথ্যে লুকিয়ে আছে এক কঠিন বাস্তব—বেকারত্ব, হতাশা এবং নিরাপদ ভবিষ্যতের মরিয়া খোঁজ।