আজকাল ওয়েবডেস্ক: কলকাতার এক রৌদ্রচ্ছায়া মাখা সকাল। বৌবাজারের ব্যস্ত গলিতে প্রতি দিনের মতোই ঝাপ খুলেছে একটি নামী স্বর্ণবিপনি। দোকানের ম্যানেজার শ্রী প্রণব চন্দ্র ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন গয়না যাচাই আর গ্রাহক সামলাতে সামলাতে। সেই সময়েই দোকানে ঢোকেন একজন যুবক। স্মার্ট, আত্মবিশ্বাসী, ভদ্র আচরণে পরিপূর্ণ।

প্রণবকে তিনি জানান যে তিনি একজন ব্যবসায়ী। বড় মাপের অর্ডার দেওয়ার ইচ্ছে আছে। কথার ফাঁকে জানান, তাঁর দরকার তিনটি সোনার গয়না ও একটি রুপোর মুদ্রা। মোট দাম প্রায় ১৩.৮৬ লক্ষ টাকা। প্রণববাবু প্রথমে একটু দ্বিধায় পড়েন। এত বড় লেনদেন চেকের মাধ্যমে! কিন্তু লোকটির হাতে একটা ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দেখাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যালেন্স। কথাবার্তাও ঠিকঠাক।

অবশেষে ৮ জুলাই চেকের বিনিময়ে তাঁকে গয়না বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে এক সপ্তাহ কাটতেই সেই চেক বাউন্স করে।

কি সেই প্রতারণার চিত্র?

প্রণববাবু হতভম্ব হয়ে যান। অজ্ঞাতপরিচয় এক লোক, যার নাম ঠিকানাও মিথ্যে। ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকার গয়না নিয়ে চম্পট! মুচিপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। মামলা হাতে নেন সার্জেন্ট অলোক সরকার।

আরও পড়ুন: এ বার রাজ্যে দোকানের সাইনবোর্ড লেখা হোক বাংলায়, বাঙালির অস্মিতা রক্ষায় একমত হলেন সকলেই

তাঁর কাছে ছিল মাত্র একটিই সূত্র। সিসিটিভি ফুটেজ। সেখান থেকে প্রাপ্ত ছবি থেকে অভিযুক্তের চেহারা বিশ্লেষণ করে তিনি শুরু করেন তদন্ত।

নানা হোটেলে খোঁজ নিয়ে মেলে একটি খবর। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে কেন্দ্রীয় কলকাতার একটি হোটেলে ছিলেন। সেখানে থেকেই পুলিশ জানতে পারে ব্যক্তিটি ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে এসেছেন।হোটেলে দেওয়া নম্বর বন্ধ। নতুন নম্বরও অচল।

অলোকবাবু প্রযুক্তিগত ভাবে নজরদারি শুরু করেন। খুঁজে পান একটি আধার নম্বর এবং নতুন মোবাইল নম্বর। যা তখন কেষ্টপুর এবং সল্টলেক এলাকায় সক্রিয়।

তদন্তে গ্রেপ্তারের নাটকীয় রূপ

১১ জুলাই সন্ধ্যায় সল্টলেকের একটি ব্যস্ত রেস্তরাঁয় অভিযান চালিয়ে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর পকেট থেকে মেলে অন্য একটি হোটেলের চাবি। যেটি ছিল পার্ক সার্কাস এলাকায়। হোটেল ঘর তল্লাশি করে পুলিশ সমস্ত গয়না এবং রুপোর মুদ্রা উদ্ধার করে ফেলে। প্রতিটি জিনিস এখনও যথাস্থানে, যত্নে রাখা ছিল একটি ব্যাগে।

কি আসল রহস্য ?

জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সামনে আসে আরও একটি প্রতারণার ঘটনা। বিধাননগর উত্তর থানায় একই কায়দায় ৮ লক্ষ টাকার সোনা আত্মসাৎ করেছিল অভিযুক্ত। সেই মামলাতেও একই ব্যক্তি যুক্ত ছিলেন।

অবশেষে মঙ্গলবার ২৯ জুলাই  আদালতের নির্দেশে প্রণববাবুর হাতে ফেরত দেওয়া হয় তাঁর হারানো গয়না।

চোখে জল নিয়ে তিনি বলেন, “ভেবেছিলাম আর গয়না ফেরত পাব না। পুলিশ যে এত চেষ্টা করেছে, আমি কৃতজ্ঞ।”

সার্জেন্ট অলোক সরকার শুধুমাত্র এক তদন্তকারী নন—একজন নায়ক। প্রতারণার ছায়া ছিন্ন করে, তিনি ফিরিয়ে এনেছেন বিশ্বাসের আলো।