শরীরের অন্যতম জটিল অঙ্গ হল মস্তিষ্ক যার প্রতিটি অংশ আমাদের চিন্তা, আবেগ, চলাফেরা ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এই মস্তিষ্কেই অস্বাভাবিকভাবে কোষের বৃদ্ধি শুরু হলে সেটিই হতে পারে মস্তিষ্কের টিউমার। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি বোঝা কঠিন বটে। তবে শরীরের কিছু সতর্ক সংকেত দেয় যেগুলো অবহেলা করলে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, মস্তিষ্কের টিউমার হল মস্তিষ্কের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি যা ধীরে ধীরে পার্শ্ববর্তী কোষগুলির উপর চাপ তৈরি করে। এতে স্বাভাবিক স্নায়ুতন্ত্রের কাজ ব্যাহত হয়। টিউমারের অবস্থান, আকার ও বৃদ্ধির গতি অনুযায়ী উপসর্গের ধরন ভিন্ন হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে সব সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ মস্তিষ্কের টিউমারের সতর্কবার্তা হতে পারে, তা হল-

আরও পড়ুনঃ অন্যের শ্বাস নেওয়া বা খাওয়ার শব্দে বিরক্ত হন? আপনি ‘মিসোফোনিয়া’য় আক্রান্ত নন তো? জানেন কী এই মানসিক রোগ?

১. ক্রমাগত মাথাব্যথাঃ মস্তিষ্কের টিউমারের অন্যতম প্রথম ও সাধারণ লক্ষণ হল অস্বাভাবিক মাথাব্যথা। এই মাথাব্যথা সাধারণ ব্যথার মতো নয়, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও তীব্র হতে পারে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় ওষুধ খেয়েও স্বস্তি পাওয়া যায় না।

২. বমিভাব ও বমিঃ মাথাব্যথার পাশাপাশি নিয়মিত বমিভাব বা বমি হলে তা সতর্ক সংকেত হতে পারে।মস্তিষ্কে টিউমারের কারণে ইনট্রাক্রেনিয়াল প্রেসার অর্থাৎ মাথার ভিতরের চাপ বেড়ে যায়, ফলে এই উপসর্গগুলো দেখা দেয়।

৩. আচরণ বা মেজাজে পরিবর্তনঃ হঠাৎ করে আচরণ বদলে যাওয়া, অতিরিক্ত রাগ, উদাসীনতা বা মনোযোগের ঘাটতি-এসব পরিবর্তন অনেক সময় মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোবের প্রভাবে ঘটে। এমনকি হঠাৎ উদ্বেগ, বিষণ্ণতা বা অস্বাভাবিক ভয়ও দেখা দিতে পারে যা অনেকেই মানসিক চাপ বলে ভুল করেন।

৪. স্মৃতিভ্রংশঃ টিউমারের প্রভাবে মস্তিষ্কের কগনিটিভ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা বা মনোযোগ ধরে রাখতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

৫. কথা বলায় সমস্যাঃকিছু রোগীর ক্ষেত্রে কথা জড়ানো, শব্দ ভুল উচ্চারণ করা, বা বাক্য গঠন করতে অসুবিধা দেখা দেয়। যদি এই সমস্যা হঠাৎ হয় এবং ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তবে তা টিউমারের একটি ইঙ্গিত হতে পারে।

৬. খিঁচুনিঃ হঠাৎ শরীরে কাঁপুনি, হাত-পা শক্ত হয়ে যাওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা-এসবই মস্তিষ্কের টিউমার থেকে হওয়া খিঁচুনির লক্ষণ হতে পারে। এটি প্রায়ই এমন মানুষের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, যাঁদের আগে কখনও এপিলেপসি বা খিঁচুনির ইতিহাস ছিল না।

৭. দৃষ্টি ও ভারসাম্যের সমস্যাঃ ঝাপসা দেখা, চোখে অন্ধকার নামা বা হাঁটাচলায় ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা-এগুলো মস্তিষ্কের টিউমারের প্রাথমিক ইঙ্গিত হতে পারে। টিউমার যদি মস্তিষ্কের ভিশুয়াল বা মোটর অংশে প্রভাব ফেলে তাহলে এই উপসর্গগুলি দেখা দেয়।

মনে রাখবেন, মস্তিষ্কের টিউমার সব সময়ই ক্যানসার নয়। তবে সময়মতো শনাক্ত না হলে এটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। তাই শরীরের সংকেতগুলিকে গুরুত্ব দিন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী বা হঠাৎ শুরু হলে কখনওই অবহেলা করা উচিত নয়। অনেক সময় সাধারণ সমস্যা মনে হলেও এটি মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সংকেত হতে পারে।