‘আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ, মেকস এ ম্যান হেলদি ওয়েলদি অ্যান্ড ওয়াইজ। ছোটবেলা থেকে এ কথাটা আমরা প্রায়ই শুনি। জীবনযাপনের ধরনে ক’জনই বা মেনে চলতে পারেন! তবে জানেন কি ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠলে জীবনের মান পাল্টে যেতে পারে। হ্যাঁ, সমাজ মাধ্যমে এখন নতুন ট্রেন্ড ‘৫ এ.এম ক্লাব’। বিশ্বজুড়ে বহু মানুষ দাবি করছেন, ভোর ৫টায় ওঠার অভ্যাসে মন শান্ত থাকে, কাজের মান বাড়ে। এককথায় মানসিক ভারসাম্য ও শারীরিক সুস্থতার চাবিকাঠি নাকি এই ট্রেন্ড!
এই ধারণাটির জনপ্রিয়তা শুরু হয় লেখক রবিন শর্মার বই ‘দ্যা ৫ এ.এম ক্লাব: ওন ইওর মর্নিং, ইলিভেট ইওর লাইফ’ থেকে। তাঁর মতে, দিনের প্রথম ঘণ্টাটি যদি নিজের সার্বিক বিকাশের জন্য ব্যয় করা যায়, তাহলে সারাদিনই শরীর-মন থাকে তরতাজা। এই ‘৫ এ.এম রুটিন’-এর মূল মন্ত্র হল- ২০/২০/২০ সূত্র। অর্থাৎ প্রথম ২০ মিনিট শরীরচর্চা, পরের ২০ মিনিট ধ্যান বা আত্মমনন, আর শেষ ২০ মিনিট কোনও কিছু শেখার কাজ করা। শর্মার মতে, এই এক ঘণ্টাই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ।
মনোবিজ্ঞানী ও যাপন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, সকালে তাড়াতাড়ি ওঠা শরীরের প্রাকৃতিক ঘড়িকে সঠিক রাখে, ঘুমের মান উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমায়। ভোরে ওঠা মানুষরা দিনে ব্যায়াম ও সৃজনশীল চিন্তার জন্য বেশি সময় পান। এর ফলে কাজের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসও বাড়ে। অনেকে আবার মনে করেন, ৫ এ.এম ক্লাব কেবল সময় নয়, বরং জীবনযাপনের একটি দর্শন। বলা যায়, নিজের জন্য সময় বার করার এক অঙ্গীকার।
তবে ঘুম বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ট্রেন্ড সকলের জন্য নয়। কেউ যদি রাতে দেরি করে ঘুমান, তাঁর জন্য ভোর ৫টায় ওঠা উল্টে ক্ষতিকর হতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, মনোযোগ কমে যায়, এমনকী মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। তাই আগে ঘুমের রুটিন ঠিক করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ভোরে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হলে ধীরে ধীরে ঘুমানোর সময় এগিয়ে আনুন, হঠাৎ পরিবর্তন নয়। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ঘুম যেন অন্তত ৭ ঘণ্টা সম্পূর্ণ হয়। অর্থাৎ সকালে তাড়াতাড়ি ওঠার জন্য কোনও মতেই ঘুমের সময়ের সঙ্গে আপস করলে চলবে না। অর্থাৎ রাত ২টোয় ঘুমিয়ে ৫ টায় উঠে পড়লে চলবে না। ৬-৭ ঘণ্টা অবশ্যই ঘুমাতে হবে। পাশাপাশি রোজ একই সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এতে ঘুম সহজে আসবে এবং আপনি তাড়াতাড়ি উঠতেও পারবেন। তাই একথা বলা যায়, ‘৫ এ.এম ক্লাব’ হয়তো সকলের জন্য নয়।
