ভাইফোঁটা প্রতিটি ভাই-বোনের জন্য অত্যন্ত বিশেষ একটি উৎসব। দীপাবলির পর পালিত এই উৎসবটি পারস্পরিক ভালবসা, স্নেহ ও সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তোলে। চলতি বছর ভাইফোঁটা পালিত হবে ২৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার। এদিন দিদি বা বোনেরা দাদা বা ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁর দীর্ঘায়ু এবং সমৃদ্ধি কামনা করেন। এরপর তাঁরা ভালবাসার সঙ্গে নিজেদের হাতে রান্না করা খাবার ভাইকে পরিবেশন করেন। অপরদিকে ভাইয়েরা বোনদের আশীর্বাদ এবং উপহার প্রদান করেন।

অনেকেই এই দিনে ফোঁটা দেওয়ার সময় কিছু ভুল করেন, যা শাস্ত্রমতে অশুভ বলে ধরা হয়। তাই জানা জরুরি, ভাইফোঁটা কীভাবে ও কোন দিক মুখ করে করা উচিত।

ভাইফোঁটার শুভ মুহূর্ত
২৩ অক্টোবর ব্রহ্মমুহূর্ত থাকবে ভোর ৪টে ৪৫ মিনিট থেকে ৫টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত— যা স্নানের জন্য শুভ বলে বিবেচিত।

অভিজিৎ মুহূর্ত থাকবে দুপুর ১১টা ৪৩ মিনিট থেকে ১২টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত।
এছাড়াও অমৃতকাল থাকবে সন্ধ্যা ৬টা ৫৭ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত, যা পুজো এবং ফোঁটার জন্য অত্যন্ত মঙ্গলজনক সময়।

ফোঁটা দেওয়ার সময় কোন দিক মুখ করে বসবেন
শাস্ত্রমতে, ভাইকে ফোঁটা দেওয়ার সময় উত্তর বা পূর্বমুখী হয়ে বসা উচিত।
উত্তরমুখী দিক ধন, সমৃদ্ধি এবং সুযোগের প্রতীক। এই দিকে ফোঁটা দিলে ভাইয়ের কর্মজীবন ও আর্থিক অবস্থায় স্থিরতা আসে বলে বিশ্বাস করা হয়।
পূর্বমুখী দিক জ্ঞান, বুদ্ধি ও ইতিবাচক শক্তির প্রতীক। তাই এই দিক মুখ করে ফোঁটা করাও শুভ বলে ধরা হয়।

জেনে নেওয়া যাক কিছু বিশেষ উপায়, যা ভাই ফোঁটার দিন করলে ঘরে আসবে সুখ-সমৃদ্ধি এবং মিলবে শুভ ফল।
ভাই ফোঁটার উপায় 
দান করুন:
সনাতন ধর্মে যে কোনও শুভ দিনে দান করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তাই ভাই ফোঁটার দিন দরিদ্র মানুষদের মধ্যে অন্ন, বস্ত্র বা অর্থ দান করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এই দিনে দান করলে ভাইয়ের জীবনে আসে সুখ-সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্য।

যমের প্রদীপ জ্বালানো:
ভাই ফোঁটার দিন বোনদের উচিত ঘরের বাইরে যমরাজের নামে একটি চতুর্মুখী প্রদীপ জ্বালানো। মনে করা হয়, এতে যমরাজ সন্তুষ্ট হন এবং ভাইয়ের আয়ু বৃদ্ধি পায়।

মিষ্টিমুখ করানো:
বোন ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে তার মঙ্গল কামনা করে এবং তাকে মিষ্টি খাওয়ায়। এদিন বোনেরা ভালবাসা দিয়ে ভাইয়ের প্রিয় খাবার রান্না করে তাকে পরিবেশন করে। এতে পারিবারিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয় ও হৃদয়ে আসে আনন্দের ছোঁয়া।

ভাই ফোঁটা এমন একটি দিন, যখন ভালবাসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আন্তরিক সম্পর্কের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে। এই উৎসব শুধু একটি প্রথা নয়, বরং আবেগ, স্মৃতি এবং পারিবারিক ঐক্যের প্রতীক। সব কিছু মিলিয়ে ভাই ফোঁটা হয়ে ওঠে এক নিখাদ অনুভূতির উৎসব, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সময়ের সঙ্গে বদলালেও সম্পর্কের উষ্ণতা কখনও ফিকে হয় না।